১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

ঠিকানা রিপোর্ট : আগামী ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ১৯ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী জাতিরাষ্ট্র গঠন এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ন্যায়বিচার-ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপি গঠন করেন। দীর্ঘ ৪৪ বছরের পথপরিক্রমায় বিএনপি স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ গঠন, গণতন্ত্রায়ণ, সমৃদ্ধি এবং দুঃশাসন, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে জনগণের পাশে থেকে নিরলসভাবে কাজ করেছে, এখনো করছে।
এক যুগের দেশ শাসন, টানা দেড় দশক ক্ষমতার বাইরে। দুই দফা আন্দোলনে ব্যর্থতা, দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্ব এবং দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-মন বাস্তবতায় প্রতিষ্ঠার ৪৪তম বছরে এসে দাঁড়িয়েছে বিএনপি।
বিশেষ প্রেক্ষাপটে ১৯৭৫ সালে সেনাপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান। তার প্রায় বছর তিনেক পর নিজের গড়া জাগো দলের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ৭৮ সালের এদিনে আত্মপ্রকাশ ঘটান জাতীয়তাবাদী দলের। ১৯ দফা কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে চলা দলটি পরের বছর জয়ী হয় সংসদ নির্বাচনে। ডান, বাম ও মধ্যপন্থীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বিএনপি পায় শক্ত রাজনৈতিক ভিত্তি।
১৯৮১ সালের ৩০ মে বিপথগামী একদল সেনাসদস্যের হাতে জিয়াউর রহমান শহীদ হলে তাঁর সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া আসেন নেতৃত্বে। তাঁর হাত ধরে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে দলটি। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার কঠিন বাস্তবতায় পড়তে হয় বিএনপিকে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন দল বিএনপি। তবে তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি এবং ছয়টি আসনে জয়লাভ করে। সংরক্ষিত একটি আসনসহ সাতটি আসন নিয়ে একাদশ সংসদে যোগদান করলেও নেই প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায়।
প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন সময় বিপর্যয়ের মুখে পড়লেও বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। কিন্তু বর্তমানে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ রাজনৈতিক দল। কারণ নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে টানা দুবার আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে দলটি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মামলা ও হামলায় বিপর্যস্ত। চলমান পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না তারা। ফলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত এ দলটিকে। তবে চারবার রাষ্ট্রক্ষমতা এবং দুবার বিরোধী দলে থাকা বিএনপি শহীদ জিয়ার আদর্শ অনুসরণ করেই চলমান বৈরী অবস্থা মোকাবিলা করবে বলে মনে করেন দলের নেতাকর্মীরা।
গত দুই বছরের মতো এবারও বাসায় থাকলেও অসুস্থতা ও শর্ত সাপেক্ষে জামিনে থাকায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উপস্থিত থাকতে পারছেন না দলীয় চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে থাকছেন না ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। দলের শীর্ষ দুই নেতা ছাড়াই ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দলটি।

৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি ঘোষণা
১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে দলটি। গত ২৩ আগস্ট বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
রিজভী জানান, ১ সেপ্টেম্বর সকাল ছয়টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সব কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, এদিন দুপুর ১২টায় দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। ওই দিন বিকেল তিনটায় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা হবে বলেও জানান রিজভী।
দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ইতিমধ্যে পোস্টার প্রকাশিত হয়েছে জানিয়ে রিজভী বলেন, ওই দিন বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২ সেপ্টেম্বর বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। একইভাবে দেশব্যাপী জেলা, মহানগরসহ সব ইউনিটে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। স্থানীয় সুবিধা অনুযায়ী আলোচনা সভা, র‍্যালি ইত্যাদি কর্মসূচি পালনে উদ্যোগ নিতেও নির্দেশ দেন রিজভী।
এ ছাড়া কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩০ আগস্ট গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে ওই দিন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিবুন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম প্রমুখ।