ঠিকানা রিপোর্ট: যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটির আগামী প্রজন্মকে লেখাপড়ায় সহযোগিতা এবং এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে খান’স টিউটোরিয়াল। খান’স টিউটোরিয়াল সাফ্যল্যের ধারাবাহিকতায় ২৫ বছরে পদার্পণ করেছে। এই উপলক্ষে খান’স টিউটোরিয়ালের জ্যাকসন হাইটসের কার্যালয়ে ১লা অক্টোবর সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন খান’স টিউটোরিয়ালের চেয়ারপারসন নাঈমা খান, সিইও ও প্রেসিডেন্ট ডা. ইভান খান, স্কলাস্কিটা স্কুলের শিক্ষক ওয়াসিমা পারভীন, খান’স টিউটোরিয়ালের ভাইস প্রেসিডেন্ট সাকিব হোসেন, ডিরেক্টর রিভু ইসলাম, ডিরেক্টর ফাইন্যান্স নিলয় ইকবাল, ডাইরেক্টর মিডিয়া পলিনা। এছাড়া অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত (বাংলা) বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশনের সম্পাদক, প্রকাশক ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে ড. মনসুর খানের স্মরণে মোনাজাত করা হয়। বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান দোয়া পর্বটি পরিচালনা করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই নাঈমা খান জানান তাদের সাফল্যের ২৫ বছরে পদার্পণের বিষয়টি। তিনি ড. মনুসর খানকে স্মরণ করেন। তিনি আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য রাখেননি। বক্তব্য রাখেন সিইও ইভান খান। তাকে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন নাঈমা খান। ইভান খান খানস টিউটোরিয়ালের শুরু থেকে বর্তমান অবধি আসা, এগিয়ে চলা, সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, হাইস্কুল স্টুডেন্ট ও তাদের অভিভাবকদের যেসব বিষয় খেয়াল রাখা দরকার ও কলেজ এডমিশনের বিভিন্ন বিষয়ে উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে স্মরণ করা হয় খানস টিউটোরিয়ালের প্রতিষ্ঠাতা ড. মনসুর খানকে। মনসুর খানের কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি ২৫ বছর আগে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গড়ে তুলেছিলেন খানস টিউটোরিয়াল। তার বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় আসা এবং সেখান থেকে নিউইয়র্কে আসা ও খানস টিউটোরিয়াল প্রতিষ্ঠার স্মৃতিচারণ করেন।
ইভান খান বলেন, আমার বাবা যখন এই দেশে আসেন তখন তার সুযোগ হয় ভার্জিনিয়া টেকে পড়ার। তিনি সেখান থেকে দেড় বছর পর নিউইয়র্কে চলে আসেন। নিউইয়র্কে আসার পর থাকতেন ব্রুকলিনে। জ্যাকসন হাইটস থেকে ব্রুকলিন অনেক দূর। তিনি চিন্তা করলেন বাংলাদেশী কমিউনিটির মানুষের কাছে এটি পৌঁছাতে হলে তাদেরকে আরও কাছাকাছি খানের সেবা পৌঁছে দিতে হবে। তিনি বিভিন্ন স্টুডেন্টদের বাসায় গিয়েও পড়ায় সহায়তা করতেন। তিনি মনে করলেন, বড় পরিসরে সেবা দিতে হলে যেখানে বাংলাদেশীরা বেশি থাকে তাদের কাছাকাছি খান’স টিউটোরিয়ালের শাখা করতে হবে। জ্যাকসন হাইটসে একটি শাখা করার পর আস্তে আস্তে শাখা বেড়েছে। এখন ১১টি শাখা থেকে খানের কর্মকান্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। ১২ জন ফুল টাইম স্টাফ ছাড়াও প্রায় ৩৫০ জন স্টাফ রয়েছে। প্রতি পিক সিজনে আমাদের স্টুডেন্ট সংখ্যা থাকে চার হাজারের কাছাকাছি।
ইভান খান বলেন, চার বছর আগে আব্বা যখন মারা গেলেন, তিনি মারা যাওয়ার পর সব কিছু আমাদের উপর আসলো। আজ তিনি নেই। তাকে আমরা গভীরভাবে ফিল করি। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্টুডেন্টদের সঙ্গেও তাদের প্যারেন্টদের সঙ্গে কথা বলছি। বাংলাদেশী কমিউনিটির ছেলে মেয়েরা ভাল করছে। তাদেরকেও আরও এগিয়ে নিতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাচ্চাদের রিপোর্ট কার্ড ডে গুলোতে অবশ্যই বাবা ও মাকে উপস্থিত থেকে টিচারদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমরা বাবা ও মায়েদেরকে বলবো আপনারা অবশ্যই আপনার সন্তানের প্রতি বেশি যতœশীল হোন ও তাদের লক্ষ্য রাখুন। বিশেষ করে নাইন থেকে টুয়েলফ গ্রেড পর্যন্ত। প্রথম সেমিস্টারে তারা ভাল ফলাফল করলেও দেখা যায় আস্তে আস্তে পড়া কঠিন হতে থাকে, তাদের মনোযোগ কমতে থাকে। ফলাফলও খারাপ হতে থাকে। তখন তাদের মধ্যে বাবা মায়ের কাছ থেকে রেজাল্ট লুকিয়ে রাখার প্রবণতা তৈরি হয়। অনেক সময় বাচ্চারা দেখা যায় স্কুল থেকে কোন নোটিশ আসলে সেগুলো তারা লুকিয়ে ফেলে। তারা যাতে সেটি করতে না পারে এই জন্য আগে ভাগেই স্কুলের ইমেইল চেক করা, পিউপলপ্যাথ চেক করতে হবে। বাচ্চারা স্কুল থেকে আসার পর এমন যেন না হয় তারা বাসায় ঢুকেই রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো । এমন হলে বাচ্চারা একা হয়ে পড়ে। এক প্রশ্নের জবাবে ইভান খান বলেন, আমাদের খানস থেকে এই পর্যন্ত এসএইচএসএটি পরীক্ষা দিয়ে স্পেশালাইজড হাইস্কুলে ২৯৯৭ জন সুযোগ পেয়েছে। এই বছর সুযোগ পেয়েছে ৩৮২ জন।
ইভান খান বলেন, অনেকেই বলছে ও শুনছেন যে স্পেশালাইজড হাইস্কুলের এখন যে পরীক্ষা হয় তা আগামীতে থাকবে না। কিন্তু আমরা স্পেশালাইজড হাইস্কুলের পরীক্ষার পক্ষে। এই জন্য আমরা মেয়ের ও গভর্নরের সঙ্গেও কথা বলেছি বিষয়টি নিয়ে। আমাদের যতদূর ধারণা আগামী ২০২০ সাল পর্যন্ত এই পরীক্ষা থাকবেই। এই পরীক্ষাতে এশিয়ান ছেলে মেয়েরা খুবই ভাল করছে। তিনি বলেন, স্পেশালাইজড হাইস্কুলে স্টুডেন্টরা সুযোগ পেলে ভাল। তাদের আইবি লীগ সহ খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ বেশি থাকে। আর সাধারণ স্কুলে পড়লে সুযোগ কম থাকে। স্পেশালাইজড হাইস্কুলে পড়ে সেই বাচ্চা ৮৭ পাবে আর আর একটি সাধারন স্কুলে পড়ে যদি ৯৫ নম্বর পায় তাহলে সেটা সমান বলা চলে। তিনি বলেন, অনেকেই কম খরচের জন্য কিউনি, সুনীর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে আবেদন করে। মনে করে খরচ কম। কিন্তু আসলে সেটা না। অনেক খরচ। কারণ সেখানে স্কলারশিপ দেওয়া হয় কম। আমাদের সাজেশন হচ্ছে অবশ্যই বাচ্চাদের জন্য পছন্দের বিভিন্ন ইউনিভারসিটি ছাড়াও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আবেদন করতে হবে।
তিনি বলেন, একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন স্টুডেন্ট পড়ার সুযোগ পাবে তখনই যখনই তার জিপিএ ভাল থাকবে ও স্যাট স্কোর ভাল থাকবে। সেই সঙ্গে লিডারশিপ ও এক্সটা কারিকুলার এক্টিভিটিস থাকবে। কলেজ এডমিশনের বিষয়ে ৬০-৭০ ভাগ জিপিএ দেখা হয়, স্পেশালাইজড স্কুলের ছাত্র ছাত্রী হলে জিপিএ থাকতে হবে ৯৩ শতাংশ, স্যাট থাকতে হবে ১৪৫০/১৫০০, নন স্পেশালাইজড হাইস্কুল হলে জিপিএ থাকতে হবে ৯৭ ভাগ, সেই সঙ্গে স্যাটের নম্বরও থাকতে হবে ১৫০০, এর সঙ্গে থাকতে হবে লিডারশিপ কোয়লিটি। ডিবেট টিমের প্রধান হলে ভাল। রচনা লিখা নিয়ে অনেকেই টেনশনে থাকে। এটা নিয়ে টেনশনের জন্য অন্যদিকে মনোযোগ দিতে পারে না। কিন্তু সেটি করার দরকার নেই। একজন টিউটরের সহায়তায় ভাল ভাবে তা লেখা যেতে পারে। লেটার অব রেকমান্ডেশন লেখাতে হবে। আমরা প্রতিবছর স্টুডেন্টদের জন্য রিকমান্ডেশন লিখি। তিনি বলেন, কলেজে এডশিনের জন্য আগে ভাগেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি বলেন, কলেজ প্রস্তুতির জন্য একজন স্টুডেন্টের নাইন গ্রেড থেকে টুয়েলফ গ্রেড পর্যন্ত কোন কোন ক্লাস কখন নিতে হবে ও স্যাট কখন দিতে হবে সব পরীক্ষার সিডিউল আমরা করে দেই।
স্টেম প্রোগ্রামই পড়তে হবে নাকি যে কোন প্রোগামেই পড়া যেতে পারে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা সায়েন্স, টেকেনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাথ পড়তে চায় তাদের জন্য এটাই বেস্ট। তবে এর সঙ্গে ল, অথবা কোডিং একটি বিষয় এবং হিউমেনেটিস একটি বিষয় থাকলে ভাল হয়। গভমেন্ট, ইকোনমিক্স পড়লেও ভাল হয়।
তিনি জানান, ব্রুকলিন টেকে আমরা মেধাবী ও দরিদ্র ছেলে মেয়েদের স্টেম প্রোগামে পড়াই। তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চাদেরকে বাবা মায়েরা তাদের পছন্দের বিষয় চাপিয়ে দেয়। কিন্তু এটা না করে আসলে বাচ্চাটির যে বিষয়ে আগ্রহ আছে, সে পড়তে চায় ও ভাল করতে পারবে তাকে সেই বিষয়ে পড়ার সুযোগ করে দিতে হবে।