২৬ ফেব্রুয়ারি লাগোয়ার্ডিয়া বিমানবন্দর থেকে উবার-লিফটে ফেরা যাবে না

ঠিকানা রিপোর্ট : নিউইয়র্ক সিটিতে উবার ও লিফট চালকদের পেমেন্ট বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন চলছে, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ড্রাইভারদের দাবি, তাদের পেমেন্ট বাড়াতে হবে।
যখন-তখন ড্রাইভারকে ডি-অ্যাক্টিভেশন করা যাবে না। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ২৬ ফেব্রুয়ারি লাগোর্ডিয়া বিমানবন্দরে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এদিন বিমানবন্দরে উবার ও লিফট ড্রাইভাররা যাত্রী নিয়ে যাবেন কিন্তু বিমানবন্দর থেকে কোনো যাত্রী ওঠাবেন না।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এ জন্য এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্স। জ্যাকসন হাইটসের মুনলাইট রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অ্যালায়েন্সের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ভৈরবী দেশাই। তিনি ২৬ ফেব্রুয়ারির ধর্মঘটের পুরো পরিকল্পনা তুলে ধরেন। ভৈরবী দেশাই ধর্মঘট সফল করার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন। সেই সঙ্গে সিটির সকল উবার ও লিফট ড্রাইভারকে পরিবার-পরিজনসহ ধর্মঘটে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের লেবার অর্গানাইজার মোহাম্মদ টিপু সুলতান, মাইজু জুয়েল, সোনাম শেরপা, নুশরাত জাহান, মোহন সিং, জাবেদ তারেক, বিজু হায়দার, আজিজুল হক, গ্যাব্রিয়েল প্রমুখ। এ ছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
ভৈরবী দেশাই বলেন, গত বছর থেকে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, যা ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ড্রাইভারদের খরচ প্রায় ২০০ গুণ বেড়েছে। বিষয়টি বিবেচনা করে টিএলসি ড্রাইভারদের পেমেন্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। উবার লিফট টিএলসির সিদ্ধান্ত না মেনে তা বাড়ায়নি। ইনফ্লাশনের কারণে ড্রাইভারদের পেমেন্ট কিছু অ্যাডজাস্ট করে টিএলসি। সে অনুযায়ী কিছুটা বাড়ে, তা-ও সামান্য। অথচ তারা যাত্রীদের কাছ থেকে ৪৯ শতাংশ বেশি ভাড়া চার্জ করেছে, কিন্তু ড্রাইভাররা পেমেন্ট পাচ্ছে না। এ ছাড়া যখন-তখন অনেক ড্রাইভারকে ডিঅ্যাক্টিভেট করা হয়। এটাও দুঃখজনক। আমরা মনে করি, কোনো ড্রাইভারকে ডিঅ্যাক্টিভেট করতে হলে তাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। কোনো কথা না শুনে গাড়ি চালানোর সুযোগ বন্ধ করা আর মেনে নেওয়া হবে না। এসবের প্রতিবাদে আমরা ধর্মঘটে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এই ধর্মঘটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বেশ কয়েকজন সমর্থন দিয়েছেন। এর আগে ৬ জানুয়ারির ধর্মঘটেও আমরা সমর্থন পেয়েছি।
মোহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, লাগোর্ডিয়া বিমানবন্দরে ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত উবার লিফটে কেবল যাওয়া যাবে। ফলে সেদিন উবার লিফটের যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। যদিও ইতিমধ্যে আয়োজকদের পক্ষ থেকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন যাত্রীদের বিকল্প ব্যবস্থা করে।
তিনি বলেন, এবারের ধর্মঘট হবে বিগত ২৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও সফল ধর্মঘট। গত ৬ জানুয়ারি আমাদের আন্দোলন নিয়ে উবার বলেছিল, আন্দোলন সফল হয়নি। তাদের এই মন্তব্যের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট, তারা ভয় পায়। তবে আমরা বলব, আমাদের আন্দোলন সফল। এবারও ধর্মঘট সফল হবে। আমরা এই ধর্র্মঘট সফল করার জন্য গাড়িচালকদের আসতে বলেছি, তারা আসবেন।
তিনি জানান, এর আগে টিএলসি ঘোষণা করেছিল, উবার লিফটের ড্রাইভারদের পেমেন্ট বাড়বে। এটি ১৯ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে, এমন ঘোষণা ছিল। কিন্তু উবার মামলা করে। তাদের মামলার কারণে এটি আর কার্যকর হয়নি। এবার আবার পেমেন্ট বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে। এখন পেমেন্ট বাড়াতে হবে। ফুল রেইজ দিতে হবে। ড্রাইভারদের আত্মপক্ষ সমর্থন ছাড়া ডিঅ্যাক্টিভেট বন্ধ করতে হবে।
নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্র্স অ্যালায়েন্সের লেবার অর্গানাইজার মোহাম্মদ টিপু সুলতান আরো বলেন, ড্রাইভারদের পেমেন্ট বাড়ানো, ডিঅ্যাক্টিভেশন বন্ধকরণসহ বিভিন্ন দাবিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত লাগোর্ডিয়া বিমানবন্দরের চারটি স্থানে পিকেট লাইন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ২৩ অ্যাভিনিউ ৯১ স্ট্রিট, মেরিন টার্মিনাল-পিকেট লাইন, টার্মিনাল বি (৯৪ স্ট্রিট), ডিটমার্স বুলেভোর্ড (৯৪ স্ট্রিট)। ওই দিন উবার ও লিফট লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্টে যাত্রী কেবল নামাবে, ওঠাবে না। ইতিমধ্যে এ-সংক্রান্ত ফ্লায়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে। যাত্রীরা বিমানবন্দরে আসতে পারবেন, এখান থেকে অন্য কোথাও উবার কিংবা লিফটে চড়ে যেতে পারবেন না। যাত্রী নামিয়ে দিয়ে উবার ও লিফটের চালকেরা মিটার বন্ধ করে দেবেন। এরপর তারা মিটার ওপেন করতে পারবেন লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্টের এলাকার বাইরে গিয়ে। সেখানে তারা যাত্রী নিতে পারবেন। আমাদের প্রতিবাদটা কেবল লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্টে।