৩ নভেম্বরের করুণ অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা

রণেশ মৈত্র : সালটা ১৯৭৫। বাঙালি জাতির এক এক করে হারানোর এবং শোকের বছর। ঘটে গেল ১৫ আগস্টের ভয়াবহ হত্যালীলা। আজ আমরা যারা গ্রামেগঞ্জে, শহরে-নগরে-বন্দরে ১৫ আগস্ট এলেই কালো ব্যাজ ধারণ, শোক মিছিল, কালো পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের রেকর্ড দিবারাত্র যত্রতত্র বাজিয়ে বহু ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ ভলিউমের দৌরাত্ম্যে মানুষের মনে বিরক্তি সৃষ্টি করতে পিছপা হই না, তাদের অনেকেই কিন্তু বেঁচে ছিলাম সেদিন।
সেদিনকার আমরা, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ দলভুক্ত কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি হাজারো চেষ্টা করেও। কোথায় তারা ডুব মেরেছিলেন আজও তা প্রকাশিত হয়নি। ন্যাপ-সিপিবি চেষ্টা করছিল ঢাকায় তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাকশালের ব্যানারে আওয়ামী লীগসহ। সে প্রচেষ্টাও তখনকার মতো ব্যর্থ হয়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, মিলিটারি পরিবেষ্টিত থাকা সত্ত্বেও প্রতিবাদ মিছিল বের করেছিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। ওই মিছিলের নেতৃত্বদানকারী অংশগ্রহণকারী বেশ কয়েকজন আজও জীবিত আছেন।

এবার বলি পাবনার কথা। ১৫ আগস্ট ভোর। আমি তখনো নিজ বাসায় নিদ্রাচ্ছন্ন। সহধর্মিণী পূরবী চুপিসারে ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে এক পেয়ালা চা খেয়ে তার চাকরিস্থল শালগাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে যায়। গিয়ে দেখে জামায়াতপন্থী শিক্ষকেরা উৎফুল্ল। স্কুলে যাওয়ার আগে পূরবী রেডিও না শোনায় ঘটনাটা ছিল তার অজানা। উৎফুল্ল জামায়াতি শিক্ষকেরাও প্রকাশ্যে কিছু বলছে না, তবে নিজেরা ফিসফিস করছে। খানিক পরে স্কুলের মাঠে কয়েকটি জটলা থেকে আসা কথাবার্তায় বিষয়টি জানতে পেরে পূরবী বাসায় ছুটে আসে।

এর আগেই প্রতিবেশী এক অ্যাডভোকেট (সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা) এসে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে জিজ্ঞেস করলেন, ‘দাদা, রেডিও শুনেছেন? ভয়াবহ খবর বলছে।’ তাড়াতাড়ি রেডিও খুলে (তখন টেলিভিশন আসেনি বাংলাদেশের বাজারে) মেজর ডালিমের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য শুনে প্রথমে বিশ্বাস না করলেও শেষতক বিশ্বাস না করে পারা গেল না।
পূরবী ও সন্তানদের এক নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে ছুটলাম শহরের ডাকসাইতে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে। উদ্দেশ্য তারা রাজি হলে এবং এগিয়ে এলে ন্যাপ-আওয়ামী লীগ যৌথভাবে প্রতিবাদ বা শোক মিছিল বের করব। কিন্তু কাউকেই পাওয়া গেল না। জানা গেল, তারা কেউ কেউ ডিসির বাংলোতে, কেউ কেউ এসডিওর বাংলোতে, আবার কেউ কেউ পুলিশ সুপার বা থানা অফিসে। একজন জানালেন, ‘দাদা অপেক্ষা করুন, বিকেলে বের করব।’ কিন্তু তাও হলো না। ক্ষুদ্র শক্তির আন্তরিক প্রচেষ্টাটি ব্যর্থ হলো।

কিছুকাল পরে, অক্টোবর মাসে, একটি গোপন ডাক এল। তাতে জানানো হয়েছে, ৬ নভেম্বর দেশজুড়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে বাকশালের উদ্যোগে প্রতিবাদ মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিজ নিজ জেলায় এই কর্মসূচি সফল করতে প্রস্তুতি নিন।
ইতিমধ্যে দিন কয়েক আড়ালে-আবডালে থেকে সপরিবারে পাবনা সদর থানার পার্শ্ববর্তী আমার তৎকালীন বাসায় ফিরে আসি। ওকালতিও শুরু করি হতাশচিত্তে। আওয়ামী লীগ দলীয় নেতৃস্থানীয় আইনজীবীরা পরদিন থেকেই আদালতে যাতায়াত শুরু করেছিলেন। তারা যে স্বাভাবিকভাবেই জীবন চালাচ্ছেন, সেটা প্রদর্শন করতেই সম্ভবত।
যা হোক, ঢাকায় খবর পাওয়ার পর ন্যাপ-সিপিবি নেতৃত্বের গোপন বৈঠকে যথাযথভাবে ৬ নভেম্বরের কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ছাত্র ইউনিয়ন তখন পাবনায় বেশ শক্তিশালী। গোপনে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাদের ডেকে প্রস্তুতি এমনভাবে নিতে বলা হয়, যাতে পুলিশ বা গোয়েন্দারা জানতে না পারে। ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা জানান, তারাও এমন নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন এবং সাধ্য অনুযায়ী ব্যাপক প্রস্তুতিও নেবেন।

হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের তিন-চারজন নেতা আমার বাসায় এসে হাজির। ছাত্র ইউনিয়ন তখনো তাদেরকে কিছু জানায়নি। ছাত্রলীগের নেতারা বলল, ‘কাকা, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ সম্পর্কে কী ভাবছেন?’ বললাম, আওয়ামী লীগ যদি নামে, তবে আমরাও নামব। তোমরা আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে যোগাযোগ করো। জনাবে তারা বলল, আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে কথা বলবেন না যেন। যা হোক, একপর্যায়ে ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হলো, গোপনীয়তা রক্ষা করে ছাত্রলীগের নেতাদের সাথে আলাপ করে যাতে যৌথভাবে বৃহত্তম সমাবেশ ওই দিন ঘটানো যায় তার উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য।

এভাবে সাফল্যের সাথেই ন্যাপ-সিপিবি, ছাত্র ইউনিয়ন-ছাত্রলীগের প্রস্তুতি চলতে চলতে এসে গেল ৫ নভেম্বর। সিদ্ধান্ত মোতাবেক, আমরা যাদেরকে বিশ্বস্ত মনে করতাম, তেমনই একজন আইনজীবী ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় অগ্রিম কোনো খবর না দিয়ে আগামী দিনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করতে গেলাম সন্ধ্যাবেলায়। যেতেই তিনি কিছুটা সংকুচিত হলেন বলে মনে হলো। গিয়েছিলাম দুজন। সিপিবির কমরেড প্রসাদ রায় ও ন্যাপের পক্ষ থেকে এই নিবন্ধের লেখক রণেশ মৈত্র। প্রসঙ্গটা তুলতেই তিনি বললেন, ‘দাঁড়ান, অমুককে ডাকি।’ তিনি এলেন এবং আলোচনা শুরু করতেই তারা বলে উঠলেন, ‘সর্বনাশ, দেশে সামরিক আইন। সময়ও নেই আর আমরা তো ঢাকা থেকে কোনো খবর পাইনি।’ আমরা বললাম, ঢাকা থেকে আমাদেরকে জানানো হয়েছে, আওয়ামী লীগকেও জানানো হলো। সুতরাং নিশ্চয় খবর এসেছে। তা ছাড়া স্থানীয়ভাবে আমাদেরও তো দায়িত্ব আছে, এমনিতেই প্রচণ্ড বিলম্ব হয়ে গেছে।

যা হোক, ঘণ্টা দুয়েক ধরে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় প্রসাদ রায় বলে উঠলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব ছিল আওয়ামী লীগকে জানানোর, আমরা জানালাম এবং আলাপও করলাম। এখন আমরা উঠব। আর প্রোগ্রাম হবেই, আপনারা স্থির করুন আপনারা যাবেন কি না।’ এই বলে আমরা উঠে পড়লাম। তারা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলে বলে উঠলেন, রাতটুকু বাকি, এর মধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া যাবে কীভাবে? বললাম, প্রস্তুতি সম্পন্ন। বিশাল সমাবেশ ও শোক মিছিল এডওয়ার্ড কলেজ ময়দান থেকে সকাল ১০টায় বের হবে। তবে কথাটা গোপন রাখবেন এবং আপনারা এলে তুষ্ট হব।
পরদিন সকালে এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে বিশাল সমাবেশ। হাজারখানেক ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগ কর্মী এবং শ দেড়েক ন্যাপ-আওয়ামী লীগ-সিপিবি নেতাকর্মীর জমায়েত। সাথে বিশাল কালো পতাকা। এসে উপস্থিত হলেন আওয়ামী লীগ কর্মী আমার সহপাঠী জ্যোতিরিন্দ্র নারায়ণ মজুমদার (গদাবাবু-বাসমালিক) বঙ্গবন্ধুর এক বিশাল বাঁধানো ছবি নিয়ে। কেউ প্রধান গেট দিয়ে না ঢুকে অন্যান্য দিক থেকে এসে মাঠে সমবেত হয়েছেন। কারণ প্রধান গেট ছিল ব্যাপক সংখ্যক পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।

প্রথমেই বঙ্গবন্ধুর গায়েবানা জানাজা, অতঃপর বের হবে শান্তিপূর্ণ এবং মৌন শোক মিছিল। ঘুরবে শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে হেড পিটি অফিস, অতঃপর সেখান থেকে অনন্তবাজার, সেখান থেকে ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর বাসভবন এবং ওখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পর সমাপ্তি।

মিছিল বের হওয়ার চেষ্টা করতেই মেইন গেটে পুলিশ বাধা দিল। পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে না বলতেই ছুটে এলেন একজন ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি বললেন, ‘দাদা, আমরাও শোকাচ্ছন্ন কিন্তু কিছু তো করার নেই। আইন তো মানতে হবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এই মাত্র শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। তাই আপনারা মাঠের ভেতরেই আলোচনা সভা করে শেষ করুন, তাতে আমরা বাধা দেব না।’
বললাম, মিছিল হবেই। সুশৃঙ্খলভাবে হবে, নিশ্চিত থাকুন। তবে যেহেতু ১৪৪ ধারার কথা বলছেন, তাই চারজন-চারজন করে সারিবদ্ধভাবে আমরা মৌন মিছিল নিয়ে গোটা রুট পরিক্রমণ করব। যদি পুলিশ বা আপনারা কোনো উসকানি না দেন, তাহলে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও শোক মিছিল হবে। তবে আপনারা উসকানি দিলে কী হবে জানি না, সে দায়িত্ব পুরোটাই আপনাদের। এটা মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজন। আশা করি, সবাই বুঝেশুনেই পদক্ষেপ নেবে। যা হোক, মিছিল বের হলো দুই সারিতে। এক সারির সামনে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ আবু তালেব খোন্দকার (তালু হাজি নামে সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন) ও অপর সারির সামনে আমি। যে দুই নেতার সাথে আগের রাতে আলোচনা হয়েছিল, তারাও ছিলেন। একজন মিছিলের মধ্যখানে, অপরজন মিছিল থেকে ২০০ গজ সামনে।

হঠাৎ ছুটে এল জ্যোতিরিন্দ্র নারায়ণ মজুমদার (গদাবাবু)। তার মাথায় বঙ্গবন্ধুর বিশাল ছবি। ওই ছবি নামিয়ে ফেলার হুকুম দিলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। জবাবে জানানো হলো, ওই ছবি নামাতে হলে গুলি করতে হবে, তাতেও নামবে কি না জানা নেই। বিষয়টা আর এগোয়নি ম্যাজিস্ট্রেটের হস্তক্ষেপে।

কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার ছিল মিছিলটিতে কোনো স্লোগান না থাকলেও তার গন্তব্যের দেড় মাইল রাস্তার প্রতিটি মোড়ে থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ২০-৫০ জন করে মানুষ যোগ দিলেন। নানা পাড়া-মহল্লা থেকেও ছেলেরা এল। ফলে দেখতে দেখতেই মিছিলটির আকার দ্বিগুণেরও বেশিতে পরিণত হলো। মানুষ যেন এটাই চাইছিল, কিন্তু পারেনি নেতৃত্বের উদ্যোগের অভাবে।

এভাবে বিকেল হয়ে গেল শেষ গন্তব্য ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর বাসভবনের মাঠে গিয়ে পৌঁছাতে। সেখানে পৌঁছানোর পর দ্রুতই পুলিশ চারদিক ঘিরে ফেলে। শুরু হয় সমাবেশ। বক্তা একজন। তার বক্তৃতা শুরু হতে না হতেই ঢাকা থেকে আসা এক ছেলে জানাল ক্যাপ্টেন মনসুরকে কারাগারে হত্যা করা হয়েছে। তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলীসহ চার জাতীয় নেতাকে ৩ নভেম্বর গভীর রাতে কারা প্রকোষ্ঠে (ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে) নির্মমভাবে হত্যা করার খবর কোনো সংবাদপত্রে প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি, রেডিও-টেলিভিশনেও না। ফলে আমরা কেউই জানতাম না এই মর্মান্তিক হত্যালীলার খবর।
খবরটি সমাবেশস্থলে মুখে মুখে প্রচার হয়ে গেলে উত্তেজনায় সবাই ফেটে পড়ে। এবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কি না ভয়ানক দুশ্চিন্তায় পড়া গেল। তবে উপস্থিত নেতাদের পক্ষ থেকে খুব কড়া ভাষায় ঘটনার নিন্দা করে বলা হলো, খবরটির সত্যতা যাচাই করে সত্য হয়ে থাকলে অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবেÑএকের পর এক হত্যালীলা কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না। এখনকার মতো সমাবেশ সমাপ্ত। ধীরে ধীরে সবাই ফিরে গেলেন।

সেদিন ছিল ৬ নভেম্বর। কিন্তু ৩ নভেম্বরের ঘটনা জানা যায়নি। এমনই নিষ্ঠুর সামরিক শাসনের আওতায় পড়তে হয়েছিল। তবে ওই দিন মনে এ ধারণাও দৃঢ় হয়েছিল যে দেশজুড়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে ১৫ বা ১৬ আগস্ট যদি কোনো নেতা আহ্বান জানাতেন, তবে শক্তিশালী গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব ছিল। আর তা যদি করা যেত, তাহলে জিয়া-এরশাদের গণতন্ত্র হরণও সম্ভবত এড়িয়ে যাওয়া যেত। আর তা যদি হতো, জাতীয় চার নেতাকেও আমরা হারাতাম না এবং তারাই পুনরায় হয়তো মন্ত্রিসভা গঠন করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে পারতেন।
তা করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। কেন? মাত্র সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় থেকেই ক্ষমতার যে স্বাদ ও বিলাসবহুল জীবনের সন্ধান পেয়েছিলেন একশ্রেণির নেতারা, তারা নানাভাবে অর্জিত সম্পদ ও জীবন হারাতে রাজি ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু নিজেই তো আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আমি পেয়েছি চাটার দল।’ বাস্তবে তা তখন যেমন সত্য প্রমাণিত হয়েছিল, এত বছর পর আজ আবার তা ততোধিক সত্য হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। তাই দুর্নীতির সীমাহীন জোয়ার জাতির নজরে আসছে। আরও প্রমাণিত, শক্তি কম হলেও বামপন্থীরা নিষ্ঠাশীল।
এবার ৩ নভেম্বরে তাই ভাবার প্রয়োজন নেতাদের এবং শহীদদের স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা কীভাবে গড়ে তুলব? সে সোনার বাংলার রূপই-বা কী হবে? জবাবে নিশ্চয় আমরা সমস্বরে বলব :
এক. বাহাত্তরের সংবিধান অবিকল পুনস্থাপন করে ধর্মনিরপেক্ষ, বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সর্বশক্তি নিয়োগ;
দুই. নারী অধিকার, সর্বক্ষেত্রে নারীর সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং নারী নির্যাতন কঠোর হস্তে দমন;

তিন. দেশকে কঠোরভাবে দুর্নীতিমুক্তকরণ;

চার. শিক্ষাকে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত করে একমুখী, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন;

পাঁচ. দেশের সকল নাগরিক ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে যাতে সকল ক্ষেত্রে সমানাধিকার ভোগ করতে পারেন, তার নিশ্চয়তা বিধান;

ছয়. বর্তমান ও বিগত দশকে সংঘটিত সকল সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচার ও দায়ী অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতকরণ;

সাত. শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি জনগণের যৌক্তিক সকল দাবি পূরণ, বেকার সমস্যার সমাধান ও দেশে নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন প্রভৃতি।

ইতিহাস থেকে যদি এমন দাবিতে উচ্চকণ্ঠ হয়ে মিছিল নিয়ে কাজে লাগাতে পারি, তবেই নেতাদের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা হবে। নয়তো সবই হবে নিছক আনুষ্ঠানিকতা।

লেখক : সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ