ঠিকানা রিপোর্ট : বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানের পর মুখ খুলেছেন এহসানুল হক মিলন। বলেছেন, দলের বর্তমান নেতৃত্ব জনপ্রিয় এই দলটিকে কোন পথে নিয়ে যাচ্ছেন, তা বোঝা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি ডিবিসি নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, ৪২ বছর রাজনীতি করে, ৭টি বই শহীদ জিয়ার জন্য লিখে, একটি বই বেগম জিয়ার জন্য লিখে, সফলতার সাথে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালণ করে, কচুয়ার জনগণের সাথে থেকে আমার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশে এসে দল থেকে এখন এই পুরস্কার পেলাম।
তিনি বলেন, গত নির্বাচনের প্রাক্কালেও আমাকে অ্যারেস্ট করা হয়েছিলো। আমি প্রথমবার ৪৪৯ দিন, দ্বিতীয়বার ৬৯ দিন জেল খেটে বেরিয়ে এসেছি। এখন চিকিৎসার জন্যও বাইরে যেতে পারছি না। বসে বসে রাজনীতি করছিলাম। এর মাঝে হঠাৎ করে বিনা মেঘে বজ্রপাত! ঘুম থেকে উঠে শুনলাম, আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কেনো বাদ দেওয়া হয়েছে, কি কারণ আমার বা কাকে দেওয়া হয়েছে- কোন উত্তর কারো কাছ থেকে পাইনি। এ নিয়ে আমাকে কেউ জিজ্ঞাসাও করেনি। তাও আমার কাছে কোন চিঠি পাঠানো হয়নি। ফেইস বুক স্ট্যাটাসে দেখতে পেলাম যে, আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
তিনি তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, আমি মিছিল-মিটিংয়ে যেতে পারিনি। তার কারণ হচ্ছে এতোটা সিনিয়র হয়ে গেছি যে, সেখানে গেলে যখন আমাকে একটি চেয়ার দেয়া হয় না, আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তখন আমি নিজে সিদ্ধান্ত নিলাম, আর সমাবেশগুলোতে যাবো না।
মিলন আরো বলেন, আমি এই ছাত্রদলকে জন্ম দিয়েছি, নিজেও জন্ম নিয়েছি। অতএব এটি আমার দল। এজন্য আমার কোন আক্ষেপ নেই। এ দলকে আমার জন্য কাজ করতেই হবে, যেহেতু এই ঘরে আমি জন্ম নিয়েছি, এই ঘরকে জন্ম দিয়েছি। অতএব আমাকে কাজ করতেই হবে।
আক্ষেপের জায়গাটি হলো- কোন দিকে হাঁটছে দলটি। আমাদের দল কোনদিকে যাচ্ছে, এই জায়গাটিতে আমাদের কোন কন্ট্রিবিউশন নেই। আমি কি সঠিক পথে হাঁটছি।
আজকের প্রেক্ষাপটে দলের উর্ধ্বতন কোন নেতা, যারা রয়েছেন, এবং নীতিনির্ধারণে যারা রয়েছেন, তাদের অধিকাংশই অন্য দল থেকে এসেছেন। তা হলে, কি চাচ্ছেন তারা, আমি জানি না।
কিছু পত্রপত্রিকায় দেখলাম যে, মাসুদ করিম চৌধুরী বলে এক ভদ্রলোক এখানে স্ট্রিং অপারেশন করেন। তিনি এখানে প্রায়ই কিছু অনুষ্ঠান করেন। সেই অনুষ্ঠানগুলোকে নিয়েও অনেকে নেপাল, ভুটান, ব্যাংকক, আমেরিকায় গিয়েছেন। তারা অনেকেই বলছেন, সেই অনেকের সাথে আমারও জড়িত থাকারও কিছুটা সম্ভবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, আমি কখনো এই কারো কাছে যাইনি। এবং আমি বিদেশে গিয়ে কখনো কারো সাথে দেখাও করিনি। আর এগুলোকে আমি বিশ^াসও করি না।
তো, এইভাবে দলেন ভেতরে বিভিন্ন রকমের ব্যাখ্যা দিয়ে যদি দলের নেতাদেরকে এইভাবে সাজা দেওয়া হয়, তাহলে দলের ভবিষ্যৎ কি- এটা নিয়ে আমার চিন্তা।
আমি আমার ব্যক্তি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করছি না। আমি চিন্তা করছি ওই শহীদ জিয়ার কথাটি- ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। প্রথমে হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ। সেটা হবে দলের দ্বারা। এখন দলের ভবিষ্যৎ কোনদিকে হাঁটছে? এটি হচ্ছে আমার চিন্তার বিষয়।
ওয়েল, যেভাবে দল এগুচ্ছে, আমি একটা স্ট্যাটিস্টিকসে দেখলাম, ১৫১ জন প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারিকে ইতিমধ্যে বহিস্কার করা হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলা-জেলা হতে শুরু করে। এর মধ্যে অনেকের দলের দায়িত্ব স্থগিত করা হয়েছে। অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ধরণের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। কেনো ঘটছে, নীতি নির্ধারকরা করছেন- এটা আমার কাছে রোধগম্য না। তবে আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বিষয়গুলো কোন অবস্থায় সমীচীন হচ্ছে না। এবং এই দলের ভবিষ্যতের জন্য বিষয়গুলো ভালো হচ্ছে না।
আমি এই দলের জন্ম দিয়েছি, জন্ম নিয়েছি- দুটিই সত্য। এ দল আমার দল, আমাদের দল। সকলের দল। এ দলটি বাংলাদেশের দল। এটি জাতীয়তাবাদী শক্তি। এই দল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সুদূরপ্রসারী চিন্তা নিয়ে এ দলকে জন্ম দিয়েছেন। এ দল কখনো ক্ষয় হবে না। এ দল টিকে থাকবে যতদিন বিশে^ও মানচিত্রে বাংলাদেশ থাকবে এবং জাতীয়তাবাদী শক্তি থাকবে। থাকতেই হবে। সেই কারণে দল আমাকে উপযুক্ত পদ দেয়নি. তাতে আমার রাজনীতি করার এরিয়া কোন অবস্থাতেই কমেনি। আমি এখনো বিভিন্ন জায়গায় কথা বলছি, টক শো করছি, লেখালেখি করছি। আমি জাতীয়তাবাদী শক্তির উন্মেষক হিসাবে এই দায়িত্বটি আমি আমরণ পালণ করবো। কারণ, দেশ the country needs us. We not need the country. কারণ কান্ট্রিকে আমার দরকার, কান্ট্রি আমাকে দরকার। সেই ক্ষেত্রে আমি মনে করি যে, আমাকে দায়িত্ব পালণ করতে হবে।
৪২ বছর রাজনীতি করে দল থেকে এখন এই পুরস্কার পেলাম!
পদাবনতির পর এহসানুল হক মিলন