
নিজস্ব প্রতিনিধি : গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ১০ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। পরে ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার বাইরে জেলা ও মহানগরে এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিলের মধ্য দিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে মিত্ররা। ৩৮টি রাজনৈতিক দল আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়। দলগুলো গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য -এই চারটি জোটের ব্যানারে আন্দোলনে রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির বাইরে পৃথকভাবে যুগপতের কর্মসূচি পালন করছে জামায়াত। এ ছাড়া কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি এবং ১২ দলীয় জোট থেকে বের হয়ে লেবার পার্টিও পৃথকভাবে আন্দোলন করছে। আর গণফোরাম (মন্টু) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) যৌথভাবে কর্মসূচি করছে যুগপতের। এদের মধ্যে বিএনপিসহ ছয়টি নিবন্ধিত দল রয়েছে।
এদিকে নতুন নিবন্ধনের লক্ষ্যে আবেদন করা ৯৩টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১২টিকে নিবন্ধনের জন্য এরই মধ্যে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি এখন দলগুলোর কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ আবেদনে দেওয়া মাঠপর্যায়ের তথ্য যাচাই-বাছাই করছে। এরপর নিবন্ধনের বিষয়টি চূড়ান্ত করবে কমিশন। এগুলোর মধ্যে পাঁচটি দল বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিএনপি শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে নতুন জোট গঠন করে ভোটে অংশ নিতে এরই মধ্যে পর্দার অন্তরালে পাঁচটি দলকে ঘিরে সার্বিক পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দুটি নিবন্ধিত দল এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় থাকা তিনটি রাজনৈতিক দল রয়েছে। নতুন জোট আত্মপ্রকাশের সময় আরও কয়েকটি দল সেখানে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। উদ্যোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় জোটের নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অনিবন্ধিত ওই তিনটি দলের নিবন্ধনপ্রাপ্তি নিশ্চিত হলে জোট গঠনের প্রক্রিয়াটিও গতিশীল হবে।
সূত্র আরও জানায়, নামের সঙ্গে ‘জাতীয়তাবাদী’ থাকা নব্য প্রতিষ্ঠিত একটি দলকে ঘিরে সাজানো হয়েছে এই পরিকল্পনা। নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর বিএনপির কেন্দ্র ও তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এই দলটিতে জড়ো হবেন। এর পরই আসবে পাঁচটি দলের জোট গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। পরিস্থিতি বুঝে বাড়তে পারে দলের সংখ্যা। এই প্রক্রিয়ার উদ্যোক্তারা আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অগ্রসর হচ্ছেন বলে জানা গেছে। উদ্যোক্তাদের দাবি, জোটের পাঁচটি দলই নিবন্ধিত হবে। ফলে নির্বাচনী মাঠে তখন এই জোটের অন্য রকম গুরুত্ব থাকবে। বিএনপির অনেক নেতা তখন জোটের ব্যানারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। এ লক্ষ্যে দলটির প্রায় অর্ধশত নেতা এখন থেকেই যোগাযোগ রাখছেন।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও যুগপতের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে বিএনপির এমপি ভাগিয়ে নিয়ে মন্ত্রী বানিয়েছে। সর্বশেষ উকিল আব্দুস সাত্তার। তার নির্বাচনী এজেন্ট থেকে শুরু করে প্রচার সবই করছে আওয়ামী লীগের নেতারা। সুতরাং এখনো সেই চেষ্টা তাদের থাকবে। সিলেটে আরিফুল হককে নিয়ে কত গল্প বানানোর চেষ্টা হলো, এখনো পারেনি। যে কারণে সতর্কতামূলক যেসব ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেগুলো নেওয়া হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করা নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশি-বিদেশি নানা চাপে থাকায় যুগপৎ আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে এই উদ্যোগের পেছনে তাদের ইন্ধন থাকতে পারে। তবে বিএনপি শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার অবস্থান ধরে রেখে ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারলে কোনো চক্রান্তে কাজ হবে না, সরকার দাবি মানতে বাধ্য হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারি বলেন, আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করতে সরকারের ওপর বিদেশিদের চাপ অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিসহ সরকারের দুর্নীতি-লুটপাটে মানুষ অতিষ্ঠ। আইনশৃঙ্খলা অবস্থাও ভালো নয়। অর্থনৈতিক অবস্থাও খারাপ। একটি নির্বাচনেও মানুষ ভোট দিতে পারছে না। অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলনে সাধারণ মানুষ ক্রমেই সম্পৃক্ত হচ্ছে। সুতরাং সব মিলিয়ে সরকার বিরাট চাপে রয়েছে। তাই চলমান যুগপৎ আন্দোলনকে তারা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবেই। এর অংশ হিসেবে বিএনপির নেতৃত্বে যেসব জোট রয়েছে, সেগুলোকে অনেক অফার দেবে। পার্লামেন্টে কিছু আসন দেওয়া, কয়েকটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার প্রলোভন দেওয়া হতে পারে। হয়তো সরকারি সেই প্রলোভনে পড়ে দু-একটি দল আন্দোলন থেকে চলেও যেতে পারে। তবে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক যে স্ট্যান্ড নিয়েছে বা যেভাবে আন্দোলনটা চালিয়ে যাচ্ছে, এটা যদি ধরে রাখতে পারে, তাহলে আওয়ামী লীগ হয়তো তাদের দাবি মানতে পারে।