৬০ বছরে শুকিয়ে যাবে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র

বিশ্বচরাচর ডেস্ক : খুব দ্রুত বরফ গলে যাচ্ছে হিন্দুকুশ হিমালয়ের পাহাড, পর্বতে। দ্রুতগলে যাচ্ছে সেখানকার বড় বড় হিমবাহগুলো (গ্লেসিয়ার)। গলছে এভারেস্ট, কারাকোরামের মতো পৃথিবীর দু’টি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গও। আন্টার্কটিকা ও আর্কটিকের (সুমেরু ও কুমেরু) পর হিন্দুকুশ হিমালয়কেই বলা হয় পৃথিবীর ‘তৃতীয় মেরু’।

হিমালয়ে সেটাই এত দ্রুত হারে হচ্ছে যে আর ৮০ বছরের মধ্যেই তার এক-তৃতীয়াংশ বরফ পুরোপুরি গলে যাবে। আর বিশ্ব উষ্ণায়নের তাপমাত্রার বাড-বৃদ্ধি যদি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখা যায়, তাহলেও অর্ধেক বরফই গলে যাবে হিন্দুকুশ পর্বতমালার। উষ্ণায়নের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাডলেই গলে যাবে দুই-তৃতীয়াংশ বরফ।

আর ৪০ বছরেই ভেসে যাবে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেকংয়ের অববাহিকা

তার ফলে, ওই অঞ্চলে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেকংসহ প্রধান যে ১০টি নদী রয়েছে, পুরোপুরি ভেসে যাবে তাদের অববাহিকাগুলো। আর ৪০ বছরের মধ্যেই। তার ফলে, বিপন্ন হয়ে পডবেন ভারত, পাকিস্তান, চীন, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটানসহ ৮টি দেশের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ। তার পর সেই হিমবাহগুলোর বরফ শেষ হয়ে গিয়ে সেগুলো রুখুসুখু পাথর হয়ে যাবে। ফলে সেই সব উৎস থেকে বেরিয়ে আসা নদীগুলো পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে।

ভয়াবহ এই রিপোর্ট দিয়েছে আন্তর্জাতিক পর্বত গবেষণা সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট’ (আইসিআইএমওডি)। এই প্রথম তৃতীয় মেরুর বরফ গলার হারের উপর চালানো হল গবেষণা। টানা ৫ বছর ধরে যে গবেষণার সঙ্গে জডতি ছিলেন বিভিন্ন দেশের ২০০-রও বেশি বিজ্ঞানী। তাদের গবেষণা খতিয়ে দেখেছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ৩৫০ জন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী।

ভয়ঙ্কর বিপদে পডবে ৮টি দেশ

উষ্ণায়নের খুব বড প্রভাব পডেেছ হিন্দুকুশ হিমালয়ে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের (২ হাজার ১৭৫ মাইল) ওই সুবিশাল পার্বত্য এলাকার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে মোট ৮টি দেশ। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান ও মায়ানমারের বড় একটি অংশ। যেখানে গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, মেকং, আমু দরিয়া, তারিম, ইরাওয়াড়ি, সালউইন, ইয়েলো ও ইয়াংঝের মতো রয়েছে ১০টি প্রধান নদী।

আইসিআইএমওডি-র ডেপুটি ডিরেক্টর একলব্য শর্মার কথায়, ‘আমরা হিসাব কষে দেখেছি, উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা যদি আরও ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তাহলে শুধুই হিন্দুকুশ হিমালয়ের তাপমাত্রা বাড়বে শূন্য দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর তাতে উত্তর-পশ্চিম হিমালয় আর কারকোরাম পর্বতমালার তাপমাত্রা বাড়বে শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’

আইসিআইএমওডি-র হালের রিপোর্ট জানাচ্ছে, হিন্দুকুশ হিমালয়ে হিমবাহ থেকে জন্মানো হ্রদের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ৮ হাজার ৭৯০টি। তার মধ্যে বরফ দ্রুত গলে যাওয়ার ফলে ২০৩টি হ্রদই ভয়াল বন্যা সৃষ্টি করতে পারে।