৬৫০ হাজার ডলারের ফান্ড নিয়ে ব্রঙ্কসে নারীদের পাশে লালএনওয়াইসি

লালএনওয়াইসির এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর সানজানা খান

ঠিকানা: লালএনওয়াইসি ৬৫০ হাজার ডলারের ফান্ড নিয়ে ব্রঙ্কসের বাংলাদেশি
আমেরিকান নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ব্রঙ্কসের নরউড এলাকাতে বসবাস করেন, এমন নারীদের জন্য তারা মূলত কাজ করছেন। ২০১৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি নিউইয়র্কে একটি নন প্রফিট সংস্থা হিসাবে রেজিস্ট্রার্ড করা হয়। রেজিস্ট্রেশনের পর মাত্র দুই বছরের মধ্যেই তারা বিভিন্ন ফান্ডিং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৬৫০ হাজার ডলারের ফান্ড পেয়েছেন। নিউইয়র্ক ফাউন্ডেশন, নিউইয়র্ক ওমেন ফাউন্ডেশন ও রবিনহুড ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠান তাদের বড় অংকের সহায়তা দিয়েছেন। এর বাইরেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে।

লালএনওয়াইসির এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর সানজানা খান বলেন, আমরা আগামী তিন বছরে ৫ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সংগ্রহ করতে চাইছি। এটা সংগ্রহ করার পর আমরা নিজেরা একটি রিচার্স ফাউন্ডেশন করতে চাইছি। এ দেশে আমাদের বাংলাদেশিদের কোন রিসার্চ ইন্সটিউট নেই। আছে ভারতীয়দের। এই কারণে আমরা মনে করছি, আমাদেরও একটি রিচার্স ইন্সটিউট প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, একটা সময় ছিল, যখন আমাদের এখানে নারীদের বসার জন্য কোন জায়গা ছিল না। সবাই মনে করে ব্রঙ্কস মানেই হচ্ছে পার্কচেস্টার। কিন্তু নরউডেও যে অনেক বাংলাদেশি বাস করেন, তা অনেকেই জানেন না। আমি এখানকার নারীদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। আমাদের স্টাফরাও কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমাদের মোট ১৫৮ জন সদস্য আছে। এরমধ্যে ২২ জন ইয়ং, ৬৫ জন বয়স্ক এবং অন্যান্যরা ৩০-৪০ বছর বয়সী। বর্তমানে আমরা স্থায়ীভাবে পাঁচজন স্টাফ কাজ করছি। এর বাইরেও পার্টটাইম ওয়ার্কার আছেন বেশ কয়েকজন।
তিনি বলেন, এই লালএনওয়াইসি করার পর এখন আমাদের নির্দিষ্ট একটি বসার জায়গা হয়েছে। এর পরিসর ভবিষ্যতে আরো বাড়বে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা এখানে এসেছেন, তাদের মধ্যে অনেক নারীই ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হন। কিন্তু সামাজিক মানসম্মানের কারণে প্রকাশ কিংবা পুলিশেও রিপোর্ট করতে চান না। তাই দিনের পর দিন তারা নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করেন। আমরা ২০১৯ সালে ২০০ মহিলার উপর একটি গবেষণা করি। সেখানে দেখা গেছে বেশিরভাগ নারীই ৮ঘন্টা বাসায় সম্পূর্ণ একাকী থাকেন। নারীদের অনেক রকম সমস্যা আমরা শুনেছি ও দেখেছি।
তিনি বলেন, আমরা যখন এ সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা এবং গবেষণা শুরু করি তখন আমাদের বাজেট ছিল জিরো। পরে আমাদের ফান্ড হয়েছে ৬৫০ হাজার ডলার। এটা অবশ্যই একটি বড় অর্জন আমাদের। এই অর্থ পাওয়ার পর আমরা আমাদের কাজের পরিধি অনেক দূর প্রসারিত করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা একাধিক গবেষণা করেছি। সেখানে দেখেছি, বাংলাদেশ থেকে আসা নারীদের ৬০-৭০ ভাগই কোন কাজ করেন না। তাদের সাথে কথা বলে বিভিন্ন সমস্যা আমরা চিহ্নিত করেছি। আমরা ৫৫৪ জন নারীর উপর এমন একটি গবেষণা করেছি, যেখানে অন্য কোন প্রতিষ্ঠান হলে সেই গবেষণার জন্য কমপক্ষে ১-২ মিলিয়ন ডলার খরচ করতো, কিন্তু আমরা মাত্র ৩০ হাজার ডলারের বাজেটে তা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি।
তিনি আরো বলেন, এটি আমরা ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে শুরু করে জুলাই মাসে শেষ করেছি। আমরা করেনার মধ্যেও বিভিন্ন মানুষজনকে ফোন দিয়ে এই কাজগুলো করেছি। সেখানে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন জানার ছিল। সেই সব প্রশ্নের উত্তর আমরা বের করেছি। তারা কি ধরণের ক্লাস করতে চাইছেন, সেটাও ঠিক করেছি। বাংলাদেশি অনেকেই হয়তো ইংরেজি লিখতে এবং পড়তে পারেন কিন্তু ঠিকমতো বলতে পারেন না। এ কারণে আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি- তারা ইংরেজি ক্লাস করতে চান কিনা, এবং চাইলে কি ধরণের ক্লাস হলে তাদেও জন্য সুবিধাজনক হবে। আমরা অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছি। তবে অনলাইন হওয়ার কারণে স্টুডেন্ট একটু কম। ইন পারসন যখন ক্লাস শুরু হবে, তখন সুবিধা হবে।
তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ৩৪টি পরিবারকে ৫৪ হাজার ডলারের সহায়তা দিয়েছি। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা আনডকুমেন্টেড। আবার এরা কোন না কোনভাবে কভিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কে কী ধরণের ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে, আমরা সেটা জানার চেষ্টা করেছি। সেটি জানার পর তাদেরকে সহায়তাও করেছি।
সানজানা খান বলেন, আমরা এখন মেন্টাল হেলথ নিয়ে কাজ করছি। অনেক নারীই জানেন না মেন্টাল হেলথ বলতে কি বুঝায়। তার মেন্টার হেলথ কেমন, এটা তার জানা দরকার। তার মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার উপায়ও জানা দরকার। এটাও আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি, তার যখন একা একা লাগে, তখন তিনি কি করতে চান? কার সাথে কথা বলতে চান? কি কথা বলতে চান? এছাড়াও আরো অনেক বিষয়।
তিনি বলেন, আমাদের বেশিরভাগ নারীরই কোন ইনকাম সিকিউরিটি নেই। তাদের অনেক খবরই মানুষ মনে রাখে না। তাই নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি অনেকেই খুব একটা গুরুত্ব দেন না।
আসলে নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এ নিয়ে আমরা ৩০০ নারীর উপর গভীরভাবে গবেষণা করছি। তিনি বলেন, আমাদের এখানে যারা কাজ করেন, তারা সবাই কাজের জন্য অর্থ পান। আমরা কাউকেই বিনা অর্থে কাজ করাতে চাই না। অনেকেই মনে করেন, নন-প্রফিট অর্গানাইজেশনে কাজ করলে তারা ভলেনটারি করবেন, কিন্তু আমরা ভলেনটারি করলেও এ জন্য অর্থ দিতে হবে। একজন নারীও বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশি নারীরা সিটি কাউন্সিলের রান করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেই হিসাবে আগামীতে আরো নারী আসবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। আমাদের ব্রঙ্কস থেকেও নারীরা আগামীতে নির্বাচনে অংশ নেবেন। সানজানা খান বলেন, আমি ২০১৫ সাল থেকে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে কাজ করছি। এরপর ২০১৮ সালে রেজিস্ট্রেশন পাই। এর আগেও আমি ১০ বছর নন-প্রফিট অর্গানাইজেশনে কাজ করেছি। সেখানেও অনেক অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে।
তিনি বলেন, নন-প্রফিট অর্গানাইজেশনে করার কারণে আমার অনেক অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা একটি টিম। সেই টিম মিলে সবাই কাজ করছি। ১৫৮ সদস্যের একটি টিমকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।
লালএনওয়াইসি নামকরণের বিষয়ে সানজানা খান বলেন, এই নামকরণের নেপথ্যে অনেক কারণ আছে। বাংলাদেশের পতাকার মাঝখানের রং লাল, আমাদের মেয়েরা বিয়ের সময়ে লাল শাড়ি পরে, টিপ পরে লাল! নারীর জীবনের একটি বড় অংশই হচ্ছে লাল! আবার রক্তের রংও লাল। এছাড়াও বিভিন্নভাবে লালের অবদান রয়েছে। এই বিষয়গুলো বিবেচনা এবং আরো বিভিন্ন সিম্বল চিন্তা করেই প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করেছি লালএনওয়াইসি।