মোহাম্মদ জামান খোকন :
আমাদের জাতীয় জীবনে নভেম্বর মাসও অন্য মাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ মাস। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের আগে ও পরে এ মাসেই কতগুলো উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। সেই দিনগুলোকেই স্মরণ করছি। এ দিনগুলোতে যাঁদেরকে হারিয়েছি, সবার রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ সোবহানু তায়ালা যেন তাদের সবাইকে পরপারে শান্তিতে রাখেন এই দোয়া করছি।
প্রথমেই স্মরণ করছি ১৯৭০-এর সেই ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের কথা। ১২ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে এক ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। সেই রাতে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ৩০ ফুটের উপর পানি এসে দ্বীপাঞ্চলের ৫ লক্ষাধিক মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আগাম কোনো আবহাওয়া বার্তা এলাকাবাসীকে জানায়নি বা লোকজনদেরকে কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ারও পরামর্শ দেয়নি। এমন কি সে খবরও দেশবাসীকে জানানো হয়নি। তিন দিন পরে বিবিসির খবরে দেশবাসী জানতে পারে সেই মহাদুুর্যোগের খবর। সারাবিশ্বে হইচই পড়ে যায়। তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়হিয়া খান তখন ছিলেন চীন সফরে। সফর সংক্ষিপ্ত করে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
সে সময় সারা দেশে রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন। মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দুর্গত এলাকায় ছুটে যান। অন্য নেতারাও ছুটে যান। সারাবিশ্ব থেকে সাহায্যসামগ্রী আসে। পাকিস্তান সরকার যে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি কতটা উদাসীন ছিলেন, এতেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। সেই সময় সব রাজনৈতিক দলের নেতারা ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবি জানায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নির্দিষ্ট তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর দাবি জানান। শেষ পর্যন্ত সারা দেশে নির্দিষ্ট তারিখেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শুধু দুর্গত এলাকাতে পরে নির্বাচন হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।
কিন্তু পাকিস্তান সরকার অর্থাৎ তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করতে ষড়যন্ত্র শুরু করে। যদিও ইয়াহিয়া খান ঢাকা সফরে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের ‘ভাবী প্রধানমন্ত্রী’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের এককালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইয়ুবের পদলেহী ভুট্টোর প্ররোচনায় ক্ষমতা হতান্তরে গরিমসি করতে থাকে। ভুটো প্রতিষ্ঠিত পিপলস পার্টি পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। যদিও ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় অধিবেশন আহ্বান করেন। সব দল ঢাকায় আসতে চাইলেও ভুট্টো আসতে রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত ১ মার্চ এক বেতার ভাষণে ইয়াহিয়া খান অধিবেশন স্থগিত করেন। সেদিন থেকেই সারা পূর্ব পাকিস্তানে স্লোগান ওঠে- আর পাকিস্তানের সাথে নয়, আমরা স্বাধীনতা চাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ২ মার্চ হরতাল ডাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার পতাকা উড়ানো হয়। ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়। সেই জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রধান অতিথি ছিলেন। তিনি ঘোষণা করেন- ৭ মার্চ তিনিই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
আসে সেই ৭ মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই একমাত্র বক্তা ছিলেন সেই জনসভায়। এসেই তিনি মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে একটানা ১৯ মিনিট ১৮ সেকেন্ড পাকিস্তানের অন্যায় ও অত্যাচারের ইতিহাস বর্ণনা করেন। সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়ে প্রস্তুতির জন্য বলেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।’ তিনি যাতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের কাছে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত না হন, সে জন্য পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছে ৪ দফা দাবিনামা পেশ করেন। সারা দেশ তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশেই চলছিল। এক সময় ইয়াহিয়া খান-ভুট্টো সবাই ঢাকা আসেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত আলোচনা ব্যর্থ হয়। ২৩ মার্চ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে ‘প্রতিরোধ দিবস’ পালন করা হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পল্টন ময়দানে এক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান করে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে তার হাতে পতাকা তুলে দেন। বঙ্গবন্ধু সবাইকে সাবধান থাকতে বলেন এবং সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
আলোচনা ব্যর্থ হলে ভুট্টো-ইয়াহিয়া খান রাতের আঁধারে গোপনে পাকিস্তানে চলে যায়। অবশেষে আসে সেই ‘কালরাত’, ২৫ মার্চ। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। সেই রাতেই পাকিস্তানি সৈন্যরা ঢাকায় ঘুমন্ত জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিডিআর ও পুলিশ হেড কোয়ার্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের আগেই তিনি ওয়ারল্যাস মারফত চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে স্বাধীনতা ঘোষণার বার্তা পাঠিয়ে দেন। আওয়ামী লীগ নেতা মান্নান সাহেব সেই স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করেন। পরে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রর কর্মী বেলাল মোহাম্মদ পটিয়া থেকে তৎকালীন মেজর জিয়াকে নিয়ে আসেন। ২৭ মার্চ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার বাণী পাঠ করেন। মান্নান সাহেবের পরে আবুল কাশেম সন্দ্বীপসহ অনেকেই স্বাধীনতার বাণী পাঠ করেন। চট্টগ্রাম শহরে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরাও মাইকিং করে সেই বাণী জনগণকে জানিয়ে দেন। এভাবেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।
পরে বঙ্গবন্ধু যোগ্য উত্তরসূরি বঙ্গতাজ তাজউদ্দিনের নেতৃত্বে ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলার আম্রকানান সেই সরকার শপথগ্রহণ করে। সেদিন থেকে ওই স্থানের নামকরণ করা হয় ‘মুজিবনগর’। এ সরকারও সারা বিশ্বে ‘মুজিবনগর সরকার’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপতি, বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন প্রধানমন্ত্রী। অন্যরা হলেন- ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামারুজ্জামান ও খন্দকার মোশতাক।
বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করে মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যের আবেদন করেন।
খন্দকার মোশতাক ভারতে বসেই ষড়যন্ত্র করেন। কিন্তু তার পরও ভারতের সাহায্য ও আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের বলিষ্ঠ ভূমিকায় আমরা স্বাধীনতা লাভ করি।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। পরে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে ব্রিটেন ও ভারত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ব্রিটেন ও ভারত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতির সম্মানে ভূষিত করেন।
এসেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেশের ক্ষমতাভার গ্রহণ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিচারপতি আবু সায়ীদ চৌধুরী নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করতে থাকেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরে কোনো শাসনতন্ত্র ছিল না। তা গঠনে দায়িত্ব দেন ড. কামাল হোসেনকে। ৭৩ সালের ৭ মার্চ স্বাধীন বাংলায় প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু কমনওয়েলথের সদস্যপদ লাভ করেন। জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। নতুন শাসনতন্ত্র দেন। এই শাসনতন্ত্র ৭৩ সালের ৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়।
এ দিকে ছাত্রলীগের একটি অংশ বের হয়ে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে ‘জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। সারা দেশে তারা অরাজতার সৃষ্টি করে। এ দিকে স্বাধীনতাবিরোধী সিরাজ সিকদারের দলও সারা দেশে হত্যা, ব্যাংক লুট, পাটের গুদামে অগ্নিসংযোগ করতে তাকে। আ স ম আবদুর রব তখন গলা উঁচিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিতে থাকেন। সব রাজাকার-আলবদর, যারা অত্মগোপনে ছিল, সবাই তখন গর্ত থেকে বের হয়ে আসে। তারা সবাই জনসভায় অংশগ্রহণ করতে থাকে।
এ দিকে খন্দকার মোশতাকও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ১৯৭৪ সালে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। একই বছর বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সবকিছু সামাল দিয়ে দেশকে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেই তখনই আসে সেই কালোরাত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়। খন্দকার মোশতাক অবৈধ রাষ্ট্রপ্রধান ও সেনাপতির পদ লাভ করে। ‘জয়বাংলা’ সেøাগান হয়ে যায় পাকিস্তানি আদলে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’। ‘বাংলাদেশ বেতার’ হয়ে যায় ‘রেডিও বাংলাদেশ’।
তারপরে আসে ৩ নভেম্বর ৭৫। এ দিকে আরেক সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ অভ্যুত্থান করেন। খন্দকার মোশতাক সরকারের সাথে বঙ্গভবনে দেন-দরবার করে প্রধান সেনাপতির পদ লাভ করেন। বলা হয়ে থাকে জিয়াউর রহমান পদত্যাগ করেছেন। আসলে সেটা ছিল খালেদের জন্য ফাঁদ। তাকে বোঝানো হয় সামরিক বাহিনী তার পক্ষে আছে। খালেদ তা বুঝতে অক্ষম ছিলেন। তিনি ক্ষমতার মোহে বিভোর ছিলেন। এ দিকে জিয়াউর রহমান সমর্থক সেনাসদস্যরাই খালেদকে ভুল বোঝায়। তারাই কর্নেল তাহেরের সেই গণবাহিনীর সাথেও যোগাযোগ রাখেন।
এ দিকে খন্দকার মোশতাক নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে আগেই তার অর্থাৎ ফারুক-রশিদের সমর্থক সেনাবাহিনীকে পাঠিয়ে জেলখানায় চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করায়। খালেদ মোশাররফ চিন্তাই করতে পারেননি সেনানিবাসে কি ঘটতে যাচ্ছে!
তারপর আসে আরেক কলোরাত, ৭ নভেম্বর। সেদিন গণবাহিনী সেনানিবাসে অফিসারদেকে হত্যা করে। জিয়াউর রহমান সমর্থক সৈন্যরাই তথাকথিত বন্দিদশা থেকে জিয়াউর রহমানকে বের করে নিয়ে আসে। খালেদ মোশাররফ বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে শেরেবাংলা নগরে তার পরিচিত সেনাবাহিনীর আরেক অফিসারের আশ্রয়ে লুকান। কিন্তু সেই গণবাহিরীর লোকেরা সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে এসে তাহের আরো দু’জনকে অফিসারকে হত্যা করে। এসব পাতানো খেলা খালেদ কিছুতেই বুঝতে পারেননি। জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছেন। পরে তাকে গ্রেফতার করেন। এক সময় বিচারের নামে তাতেও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেন। জিয়াউর রহমান এক ঢিলে দুই পাখি মারেন। ৭ নভেম্বর অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়। বিমানবাহিনীর সদস্যদের হত্যা করা হয়। জিয়াউর রহমান সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন। নামকাওয়াস্তে সায়েম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এক সময় তিনি পদত্যাগ করেন। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি পদ গ্রহণ করেন।
’৭৫-এর ৭ নভেম্বরের পর দেশ পুরোপুরি পাকিস্তানি আদলে পরিণত হয়। পাকিস্তানের লৌহমানব আইয়ুবের মতো হ্যাঁ-না ভোট করেন। বঙ্গবন্ধুর নাম, ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস- সবই বুটের তলায় চলে যায়। এক সময় জিয়াউর রহমানও নিহত হন। তারই উত্তরসূরি এরশাদ ক্ষমতা নেন। তিনিও প্রায় ৯ বছরের অধিক দেশ শাসন করেন। সেই পাকিস্তানের আদলে। তিনি আরো এক ধাপ এগিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত হত্যাকারী ফারুককে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন।
এ দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বেঁচে যাওয়া দুই কন্যা- শেখ হাসিনা ও রেহানা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন। ১৯৮০ সালে হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। এক সময় আন্দোলনে এরশাদের পতন হয়। প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের অধীনে নির্বাচন হয়। নির্বাচনে জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত দল ক্ষমতায় যায়। জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি ঘোষণা দেন কোনো সরকারি অফিসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামের আগে ‘বঙ্গবন্ধু’ বলা বা লেখা যাবে না। হঠাৎ তিনি ১৫ আগস্ট নিজের জন্মদিন পালন শুরু করেন। যদিও নিপূণ পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে তার পিতা বলেছিলেন- খালেদা জিয়ার জন্ম যেদিন হয়, বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছিল সেদিন। পরিবারে এ জন্য তাকে ‘শান্তি’ বলে ডাকা হতো। যা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জাব্বারও কিছুদিন আগে উল্লেখ করেছেন।
খালেদা আমলে মাগুরার নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেই কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি বিল’ বাতিল করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করেন। জনগণ সেই ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিতে থাকে। এখন তা আমাদের জাতীয় স্লোগান। বিচার শেষ হয়নি।
পরে ২০০১ সালে আবার জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত দল ক্ষমতায় যায়। নির্বাচন নিয়ে আবার প্রহসন শুরু হয়। অবশেষে সেনা সমর্থিত সরকারের আমলে মহাজোট আবার ক্ষমতায় যায়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকরী হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরী হয়। দেশ এখন উন্নয়নের পথে।
আবারো আসছে ’৭০-এর সেই ১২ নভেম্বর। ’৭৫-এর ৪ নভেম্বর, ’৭৫-এর ৩ নভেম্বর, ’৭৫-এর ৭ নভেম্বর ফিরে আসছে। আমরা সেই জলোচ্ছ্বাসে নিহত জনগণ, ৩ নভেম্বরের মুজিবনগর সরকারের সদস্যগণ, ৭ নভেম্বরের মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করছি। তাদের সবার জন্য আবার সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছি- তিনি যেন পরজগতে তাদের শান্তিতে রাখেন। সব শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ভাই-বোনদেরও রূহের মাগফিরাত কামনা করছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনার কাছে আবেদন- আইনশৃঙ্খলা কঠোর করুন। আপনার সব অর্জন ধরে রাখুন। সব হত্যাকাণ্ডের বিচার ও বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর করার ব্যবস্থা করুন। আপনি সুস্থ থাকুন।
হে সৃষ্টিকর্তা, আমাদেরকে তোমার ও রাসূলের পথে চলার শক্তি দাও। কোভিডের মতো মহামারিকে তুমি উঠিয়ে নিয়ে যাও। তুমিই আমাদের সহায়। আমিন।
-পাকিপসী, নিউইয়র্ক।
লেখক : কলামিস্ট।