৭২ ঘণ্টা মানে কী, অনেকের অজানা পিসিআর টেস্ট সার্টিফিকেট

নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারা দেশে ফিরে যাচ্ছেন বা কোনো কাজে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যাচ্ছেন, তাদের অনেকের মধ্যে একটি বিষয় নিয়ে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কাজ করছে। এ বিষয়ে তারা সমাধান খোঁজার জন্য নানাজনের দ্বারস্থ হচ্ছেন, কিন্তু প্রকৃত সমাধান পাচ্ছেন না। বিষয়টি হচ্ছে কোভিড-১৯ পিসিআর টেস্ট পরীক্ষা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারা বাংলাদেশে কিংবা অন্য কোনো দেশে যাবেন, এই পিসিআর টেস্টের রেজাল্ট তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরে দেখাতে হবে। আবার সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দরে নামার পরও দেখাতে হবে। সেই রিপোর্ট হতে হবে অবশ্যই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। এই ৭২ ঘণ্টা কীভাবে কাউন্ট হবে, সেটা অনেকেরই অজানা। অনেকেই মনে করেন, রিপোর্ট পাওয়ার পর থেকে ৭২ ঘণ্টা। আবার কেউ কেউ মনে করেন, স্যাম্পল কালেকশন করার সময় থেকে ৭২ ঘণ্টা। এ অবস্থায় এটা নিয়ে বিরাট বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ ৭২ ঘণ্টার আগের রিপোর্ট দিলে তাতে বিমানে ওঠার অনুমতি মিলবে কি না, তা নিয়ে অনেকেই রয়েছেন ধোঁয়াশায়। অন্যদিকে যেসব হাসপাতাল, মেডিকেল সেন্টারে টেস্ট করানো হয়, সেখানে গেলে বলা হচ্ছে, দুই থেকে চার দিন লাগবে রিপোর্ট দিতে। সে ক্ষেত্রে যাত্রীর যাওয়ার সময় পার হয়ে যাবে। তাই স্যাম্পল দেওয়ার পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট না পেলে সংশ্লিষ্ট যাত্রী বিমানে চড়তে পারবেন না।
এ ব্যাপারে একটি ট্রাভেল এজেন্সির কর্ণধার বলেন, শুনেছি একজন যাত্রীর রিপোর্ট ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ছিল না বলে তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি জানতেন, তাকে ৭২ ঘণ্টার রিপোর্ট নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সেই ৭২ ঘণ্টা কখন থেকে গণনা করা হয়, সেটা তারা জানা ছিল না। তিনি ওই দিন না যেতে পারায় তাকে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি বলেন, আসলে আমরাও ঠিক জানি না কারা কাঁটায় কাঁটায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দেয়।
জ্যাকসন হাইটসের খ্যাতনামা একটি ট্রাভেল এজেন্সির কর্ণধার বলেন, নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া এখন দেশে না যাওয়াই ভালো। এখন রিপোর্টের সময় ও পরীক্ষার সময় নিয়ে কারো কারো মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। কোনো কোনো ট্রাভেল এজেন্সি এ বিষয়ে যাত্রীদের যথাযথ পরামর্শ দিতে পারে না। ফলে যাত্রীদের এ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কিন্তু আমরা এ বিষয়ে যাত্রীদের স্পষ্ট ধারণা দিই। ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট হলে যাত্রীরা বিমানে চড়তে পারবেন, যদি তার করোনা নেগেটিভ হয়। তারা যারা দিনে দিনে রিপোর্ট পেতে চান, তাদের আমরা পরামর্শ দিই ম্যানহাটনের মাউন্ট সিনাইয়ে যেতে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা সার্ভিসের সুবিধা রয়েছে।
এদিকে জ্যাকসন হাইটসের একটি আর্জেন্ট কেয়ারে গিয়ে জানা যায়, তারা প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে টেস্ট করানোর কাজ শুরু করেন। সেখানে সকাল ছয়টা থেকেই মানুষ লাইন ধরা শুরু করে। তবে সেখানকার কর্তৃপক্ষ ৪৮ ঘণ্টায় রিপোর্ট পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয় না। সেখানে দুই থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। সে ক্ষেত্রে অনেক যাত্রীর ফ্লাইট মিস হয়। এদিকে এলমহার্স্ট হাসপাতালও তিন দিনের আগে রিপোর্ট দিতে পারে না। তবে তারা বলে দেয়, কোন কোন জায়গায় টেস্ট করালে নির্ধারিত সময়ে রিপোর্ট পাওয়া সম্ভব। এর মধ্যে রয়েছে ব্রুকলিক, ব্রঙ্কস, কুইন্সের একাধিক পয়েন্ট। র‌্যাপিড পয়েন্ট অব কেয়ার টেস্ট সোমবার থেকে চলে রোববার পর্যন্ত। সাধারণত সকাল নয়টায় শুরু হয়। এর মধ্যে রয়েছে ব্রুকলিনের বরো পার্ক, ফার রকাওয়ে, এডওয়ার্ড গ্র্যান্ট, কিউ গার্ডেন হিল লাইব্রেরি, মিডউড প্রিকে, সেন্ট জেমস রেক স্টোর। যেসব পয়েন্টে সময়মতো র‌্যাপিড টেস্ট হয়, সেগুলোর ঠিকানা হচ্ছে : বরো পার্ক, ৪০০২ ফোর্ট হ্যামিলটন পার্কওয়ে, ব্রুকলিকন, নিউইয়র্ক-১১২১৮; ফার রকাওয়ে ৩৯-২০ রকাওয়ে বিচ বুলেভার্ড, কুইন্স, নিউইয়র্ক-১১৬৯১; এডওয়ার্ড গ্র্যান্ট, ১৩০২ এডওয়ার্ড এল গ্র্যান্ট হাইওয়ে (এনট্রেন্স অন ডব্লিউ ১৬৯ অ্যান্ড ক্যামওয়েল), ব্রঙ্কস, নিউইয়র্ক-১০৪৫২; কিউ গার্ডেনস হিলস লাইব্রেরি, ৭২-৩৩ ব্যালি প্লেস, কুইন্স, নিউইয়র্ক-১১৩৬৭; মিডউড প্রিকে, ১২২৩ কনি আইল্যান্ড অ্যাভিনিউ, ব্রুকলিন, নিউইয়র্ক-১১২৩০ এবং সেন্ট জেমস রেক সেন্টার, ২৫৩০ জিরম অ্যাভিনিউ, ব্রঙ্কস, নিউইয়র্ক-১০৪৬৮।
এ ছাড়া নিউইয়র্ক থেকে যারা বাংলাদেশে ভ্রমণ করেছেন, তাদের কয়েকজনের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, তারা নর্দান বুলেভার্ডের একটি পয়েন্ট থেকে টেস্ট করিয়েছেন ও সেখান থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট নিয়ে দেশে গেছেন।