মঈনুদ্দীন নাসের : ইমিগ্রেশন আইন প্রণয়ন করে ড্রিমারদের রক্ষা ও আগ্নেয়াস্ত্র কেনাবেচার কঠোর ব্যাকগ্রাউন্ড পরীক্ষার জন্য জোরদার গণদাবি সত্তে¡ও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস এ বিষয়ে কোন নতুন আইন প্রণয়ন করতে পারছে না। গত পাঁচ বছরের মধ্যে ক্যাপিটল হিলে আরেকবার আগ্নেয়াস্ত্র ও ইমিগ্রেশন বিতর্ক একসাথে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার ফলাফল আরো বেশি নেতিবাচক। তেমন কোন অগ্রগতি সাধন হচ্ছে না। ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে এক প্রাক্তন ছাত্রের গুি তে নিহত হয়েছে ফ্যাকাল্টি মেম্বারসহ ১৭ জন শিক্ষার্থী। এর আগে ২০১৩ সালের গোড়ার দিকে কানেকটিকাটে এক এলিমেন্টারি স্কুলে ২০জন ছাত্র ও ছয়জন শিক্ষককে এক গানম্যান গুলি করে হত্যা করে। একই সময় সিনেট বন্দুক কেনার সময় বর্ধিত ব্যাকগ্রাউন্ড চেক-আপের কথা বলে। সেসময় অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের সিটিজেনশিপ দেয়ার একটি দীর্ঘ বিল এবং বর্ধিত সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়ও কংগ্রেস বিবেচনায় নেয়।
ঐসময় অস্ত্র নিরোধক আইন রিপাবলিকানদের ফিলিবাস্টারের সম্মুখীন হয় এবং তার কয়েক মাস পর সিনেট ইমিগ্রেশন পরিকল্পনা পাশ করে। তবে তা হাউজে পাশ হয়নি।
আজ কংগ্রেস তার চেয়ে আরো সংকীর্ণ এক ইমিগ্রেশন বিলের কাদায় আটকে আছে। আর তা মাত্র শিশু হিসেবে এদেশে নিয়ে আসা লাখ লাখ অবৈধদের বৈধতা দেয়ার জন্য। হাউজ এখনও ইমিগ্রেশন বিতর্কের সময়সূচিও নির্ধারণ করেনি। যদিও ৫ মার্চ ডেডলাইন দ্রæত এগিয়ে আসছে। অথচ ট্রাম্প ওবামার শাসনের নির্বাহী আদেশকে বাতিল করেছেন। ড্রিমারদের রক্ষার আর কোন পথ এখনও হয়নি। ১৩ ফেব্রæয়ারি গণ-শুটিং করে ১৭ জনকে ফ্লোরিডা হাই স্কুলে হত্যা করার পর হাউজ কিংবা সিনেট নেতারা আগ্নেয়াস্ত্র আইন পরিবর্তনের কোনরূপ ইচ্ছা প্রদর্শন করছেন না।
কংগ্রেসের এই অকেজো মনোভাব এমন সময় প্রদর্শন করা হচ্ছে, যখন ৯০ শতাংশ ভোটার বন্দুক কেনার সময় আরো কঠোর ফেডারেল ব্যাকগ্রাউন্ড চেক সিস্টেমের পক্ষে মত দিয়েছেন। আর ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ ভোটার ড্রিমারদের আমেরিকায় রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। যখন এতো বেশি জনসমর্থন এসব প্রস্তাবের পক্ষে, তখন এ ধরনের নেতিবাচক মনোভাব কংগ্রেস কেনো পোষণ করছে, তা অনেকের ধারণার বাইরে। কংগ্রেস এখনও মুখ গুঁজে থাকতে চায় এসব ক্ষেত্রে।
২০১৩ সালের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক আইনের প্রধান রিপাবলিকান স্পন্সর সিনেটর প্যাট্রিক জে টুমি বলেন, এটা হচ্ছে অনেক বড় প্রশ্ন। যখন আপনি কোন উত্তর খুঁজে পাবেন, তখন আমাকে জানাবেন।
সিনেটর টুমি এখন এই আইনের সমর্থক। তিনি ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ডেমক্রেট সিনেটর জোন মানচিন-থ্রির সাথে এই আইনের কো-স্পন্সর ছিলেন। কিš তিনি ইঙ্গিত দেন যে, গত পাঁচ বছরে এ বিষয়ে রাজনৈতিক ভাবাবেগে কোন পরিবর্তন হয়নি।
২০১১ সালে রিপাবলিকানরা কংগ্রেস দখলে নেয়ার পর ডেমক্রেটরা কখনও কোন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিলে ভোট নিতে পারেনি। হাউজ জুডিসিয়ারি কমিটি অস্ত্র সহিংসতার বিষয়ে কোন শুনানি অনুষ্ঠান করেনি। কমিটিতে ডেমক্রেট র্যাঙ্কিং মেম্বার নিউইয়র্কের জেরল নাডলার বলেন, ‘একটি শুনানিও অনুষ্ঠিত হয়নি। গত ১৬ ফেব্রæয়ারি শুক্রবার এ বিষয়ে নতুন আইনের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এই বিষয়ে কোন ব্যব¯া না নেয়া গ্রহণযোগ্য নয়।
সিনেটর টুমি বলেন, গণদাবি যদিও কংগ্রেসের ত্বরিত ব্যব¯া নেয়ার পক্ষে, তথাপি অস্ত্রনিয়ন্ত্রণ এবং ইমিগ্রেশন বিষয় দুটি সহজ নয়।
টুমি বলেন, তার আংশিক হচ্ছে আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ বেশ উত্তপ্ত, আর দ্বিতীয়ত দেখতে তা যতো সহজ মনে হয়, আসলে তা ততো সহজ নয়।
একজন সিনিয়র হাউজ রিপাবলিকান সিনেটকে এ বিষয়ে দায়ী করে বলেনÑ এর কারণ হচ্ছে সিনেট প্রাচীন পথে অনেক ইস্যু একসাথে সমাধান করতে চাচ্ছে। আর তাতে সহজ কাজ জটিল হচ্ছে।
নর্থ ক্যারোলিনার প্রতিনিধি প্যাট্রিক ম্যাকহেনরি হচ্ছেন রিপাবলিকান চিফ ডেপুটি হুইপ। তিনি বলেন, এটা দেয়াল নির্মাণের ইস্যু নয়। এটা ড্রিমারদের ইস্যু নয়। এটা এমন কিছু নয় যে, যারা সীমান্তে নিজেদের উপ¯িত করে তাদের কিভাবে মোকাবেলা করবেন। এটা এমন নয় যে, কিভাবে আপনি পরিবার বা চেইন ইমিগ্রেশন দেখবেন। দেখা হচ্ছেÑ সিনেট এসব বিষয়কে এক দানিতে রাখতে চায়।
আর এভাবে জটলা পাকিয়ে কংগ্রেস সব কিছু করতে চায়। একদিকে রাখে ডেমক্রেটদের দাবি, অন্যদিকে দেয় রিপাবলিকানরা যা চায় তা। অর্থাৎ আপনি এটা করলে আইন এটা করবে। তারপর সেটা আপনি করলে আপনাকে এটাও করতে হবে। এ ধরনের জটলার কথা ম্যাকহেনরি উল্লেখ করেন। আর এখন বলা হচ্ছে ড্রিমারদের বৈধতা দিলে সীমান্ত দেয়াল নির্মাণের অর্থ দিতে হবে। আর এ ধরনের দর্শন ব্যর্থ প্যাকেজের জন্ম দেবে। সে কারণে এ উত্তেজনাকর রাজনৈতিক আবেশে তা ব্যর্থ হচ্ছে। আর যদি প্রত্যেক পক্ষ আপত্তিকর বিষয় তুলে ধরে, তাহলে তা ভোট পাবে না বরং তা থেকে আইন প্রণেতারা নিজেদের বিমুখ করে নেবে।
ম্যাক হেনরি বলেন, যদি সিনেটে প্রত্যেক বিল উত্থাপন করা হয়, তা অনেক বড় মার্জিনে পাস হবে। কিš সব কিছু এক সাথে উত্থাপন করলে তা পাস হবে না। ম্যাকহেনরি সব বিষয়কে এক একটা করে উত্থাপনের পক্ষে মত দেন।
তিনি বলেন, সিনেট আইন প্রণয়নের ওয়েস্ট ল্যান্ডে পরিণত হয়েছে। অনেক কিছু যখন সকলে বাড়ি চলে যায়, তখন ভয়েস ভোটে পাস করে নেয়। যেমন, ২০১৩ সালে মানচিন টুমি বিল ছিলো ৫০ পৃষ্ঠার আইন, যাতে শুধু অস্ত্র কেনা যায়, আর স্টেট অস্ত্র বিক্রয় ও সহিংসতা জরিপে কমিশন সৃষ্টির প্রস্তাবও সংযুক্ত ছিলো।
ইমিগ্রেশন বিল নিয়ে টেক্সাসের রিপাবলিকান সিনেটর জন করনিন বলেনÑ আমি ভাবছি যে, এটা সম্ভবত ছোট আকৃতির কিছু হবে।
ম্যাক হেনরি বলেন, ১৮৫০ সালে যখন ওয়াশিংটনে ক্রীতদাস বিক্রি নিষিদ্ধকরণ বিল নিয়ে আপোস রফা হচ্ছিলো, তখন তার সাথে অন্যান্য বিষয় জুড়ে দিয়ে বিরাট প্যাকেজ তৈরি করা হলে তা সিনেট ফ্লোরে পাস হয়নি। সিনেটর হেনরি ক্লে তা করেছিলেন। তারপর স্টিফেন ডগলাস বিলটিকে পাঁচটি পৃথক বিলে বিভক্ত করে পেশ করেন। এক সময় সবকটি পাস হয় এবং তা সিভিল ওয়ার ১০ বছরের জন্য ¯গিত করতে সক্ষম হয়।
ম্যাকহেনরি বলেন, এ ঘটনাটি ইমিগ্রেশন বিলের জন্য রেফারেন্স পয়েন্ট হতে পারে। জটিল বিষয় কীভাবে নিরসন করা যায়, তা তার একমাত্র পথ।
তাছাড়া আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বিল তৈরির পূর্বে যেভাবে আলোচনা হয়, বিল তৈরির সময় তা অনুসরণ করা হয় না।
ওকলাহোমার রক্ষণশীল সিনেটর জেমস ল্যাঙ্কফোর্ড সিনেট বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেয়। কারণ, তিনি বলেনÑ তিনি ইমিগ্রেশন বিষয়ক সভায় যেসব আলোচনা শুনেছেন, বা অংশ নিয়েছেন, তার অনেক প্রস্তাবও নেই বিলে।