
স্পোর্টস রিপোর্ট : ২০০৯-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজে শেষ টেস্ট খেলেন দেশসেরা পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশি পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৮ উইকেট নেয়া মাশরাফি ইনজুরির কারণে টেস্টে আর ফিরতে পারেননি। ঠিক সেই সফরেই অভিষেক হয়েছিল আরেক পেসার রুবেল হোসেনের। নিজের প্রথম ম্যাচেই তিন উইকেট নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। সেই সঙ্গে বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়ের সাক্ষীও হন রুবেল। এরপর কেটে গেছে ৯ বছর।
কিন্তু এর মধ্যে রুবেল খেলেছেন মাত্র ২৫ টেস্ট। উইকেট পেয়েছেন মাত্র ৩৩টি। ওয়ানডে ও টি-২০তে দেশের পেসারদের মধ্যে রুবেল সেরা হলেও সাদা পোশাকে বল হাতে তেমন উজ্জ্বল নয় তার পরিসংখ্যান। তার বোলিং গড় (৭৯০০) এতটাই বাজে যে তাকে টেস্টে নির্বাচকরা বিবেচনাই করতে চান না। গেল বছর শেষ সুযোগ পেয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড সফরে। সেখানেও নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। আগামী মাসেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে আরেকটি দ্বিপক্ষীয় সফরে যাচ্ছে টাইগাররা। এখান থেকে রুবেল চাইছেন টেস্টে ঘুড়ে দাঁড়ানোর সুযোগ। সেই লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করছেন। যদি সুযোগ পান তিনি আত্মবিশ্বাসী নতুনভাবে টেস্টে নিজেকে চিনিয়ে দিতে। তবে, তার সামনে এখন চ্যালেঞ্জ তরুণ পেসাররাও। নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের আক্ষেপ ও লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেছেন একটি জাতীয় দৈনিকের একান্ত সাক্ষাৎকারের সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন : ৯ বছর ধরে জাতীয় দলে খেলছেন, এখনো নিজের চ্যালেঞ্জ কোথায় মনে করেন?
উত্তর : হ্যাঁ, অনেক দিন তো হয়ে গেল জাতীয় দলে খেলছি। ভালো-মন্দ মিলিয়ে কেটেছে। আর এখনো আমার চ্যালেঞ্জটা টেস্ট খেলা। যার জন্য নিজেকে ফিট রাখছি। কারণ টেস্টে নিজেকে ফিট না রাখলে দীর্ঘ সময় বল করা কঠিন, খেলাও যায় না। কিছু দিন অসুস্থ ছিলাম। এখন মাঠে ফিরে প্রস্তুতি নিচ্ছি যেন টেস্টে সুযোগ পেলে খেলতে পারি। আসলে আমি চাইছি নিজেকে এমনভাবে প্রস্তুত রাখতে যেন সামনে যে টেস্ট সিরিজ আছে সেই দলে সুযোগ পাই।
প্রশ্ন : ওয়ানডে ও টি-২০ চেয়ে টেস্টে সুযোগ কম পান আপনি
উত্তর : টেস্টে আমার গড় বলেন, ইকোনমি বলেন সবই খারাপ সেই সঙ্গে আমি এখানে ২৫ টেস্ট খেললেও উইকেট একেবারেই কম। যে কারণে আমার সুযোগ হয় না। এবার আমি নিজেকে সেইভাবেই প্রস্তুত করছি যদি টেস্টে থাকি ও একাদশে সুযোগ পাই তাহলে যেন দলের হয়ে উইকেট নিতে পারি। এ ছাড়াও চাইবো আমার বোলিং গড়টা ভালো করার জন্য। সত্যি কথা বলতে কি যদি সুযোগ না পাই তাহলে নিজেকে সংশোধন করব কিভাবে? আমি চাই ভুলগুলো শুধরাতে।
প্রশ্ন : ৯ বছরেও নিজের বোলিংয়ে কেন সংশোধন আনতে পারেননি?
উত্তর : আমার বোলিং শক্তি, আমি জোরে বল করি। এটি ওয়ানডে ও টি-২০ জন্য বেশ ভালো। কিন্তু টেস্টে জোরের বলে কাজ হয় না। সেখানে এক জয়গাতে বল করে যাওয়া, স্পট বোলিং বলে সেটাই দরকার। ধৈর্য ধরে বোলিং করাটাই আমার হচ্ছিল না। আমি মাশরাফি ও সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি তারাও বলেছেন আমাকে যে আমি যেন এক জায়গাতে বল করি। এটাই আমার টেস্ট বোলিংয়ে দুর্বলতা ছিল। এ কারণে আমার উইকেটও অনেক কম। এটা নিয়ে কাজ করছি। তাই ফিট থাকাটা আমি জরুরি মনে করি। আরেকটা বিষয় হলো বাংলাদেশ খুব বেশি টেস্ট খেলে না।
প্রশ্ন : এ দেশের পেসারদের টেস্টে দুর্বলতার কারণ কি?
উত্তর : পেসারদের দুর্বলতার অনেকগুলো কারণ আছে। এর মধ্যে অন্যতম দুটি হলো ইনজুরি ও বাংলাদেশের কম টেস্ট খেলা। মাশরাফি ভাই সেই কবে ৭৮ উইকেট পেয়েছেন কিন্তু ইনজুরির কারণে আর ফিরতে পারেনি। রাজীব (শাহাদাত হোসেন) ভাই ৭২ উইকেট পেয়েছেন, তিনিও ইনজুরির কারণে আর সুযোগ পাচ্ছেন না। আমরা তাদের পরে বা সঙ্গে শুরু করেছি তারাও নানা সময়ে ইনজুরিতে পড়ে পিছিয়ে গেছি। আরেকটা কারণ হলো, দেখেন বাংলাদেশ দল বছরে কতগুলো টেস্ট খেলে? যখন খেলে তখন তো সেরা পারফরমারদেরই সুযোগ আসে। এ ছাড়াও দেশের উইকেটেও আমাদের পেসারদের জন্য সহায়তা থাকে না। আমাদের অনেক টেস্টে দেখবেন একাদশে একজন পেসার খেলেছে। ঘরোয়াতেও একটা সময় পেসারদের দাম ছিল না। সেটিও উইকেটের কারণে।
প্রশ্ন : অনেক তরুণ পেসার এসেছে তাদের কি প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন?
উত্তর : প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবি না, তবে তাদের আমি চ্যালেঞ্জ মনে করি আমার জন্য। আমি জানি যদি নিজেকে ফিট না রাখতে পারি তাহলে নতুন যারা আসছে ওদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারব না। আবার এটাও ভালো লাগে যে এখন অনেক পেসার উঠে আসছে যা আমাদের ক্রিকেটের জন্য অনেক ভালো সংবাদ।
প্রশ্ন : আরেকটি বিশ্বকাপ চলে আসছে, সেই সময়ের তুলনায় এখন নিজেকে কতটা নির্ভার মনে করেন?
উত্তর : এটি ঠিক সেই সময় আমার উপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে। কিন্তু সত্যি কথা আমি ভেঙে পরিনি। এখন অনেকটা বছর চলে গেছে, আমার মধ্যেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। আশা করি সামনের বিশ্বকাপ আসরে সুযোগ পেলে একইভাবে ভালো কিছু উপহার দিতে পারব। তবে, তার আগে আমার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ সামনে থাকা সিরিজগুলো। আফগানিস্তানে সফর আছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাবে দল, এরপর বিপিএল আবার জিম্বাবুয়ে আসবে। এখন বিশ্বকাপের আগে এ সিরিজগুলোতে আমাকে ভালো করতে হবে, ফিট থাকতে হবে। এ সময়ের চ্যালেঞ্জটা যদি নিতে পারি তাহলে বিশ্বকাপে সুযোগ আসবে।
প্রশ্ন : পরিবারের কতটা সমর্থন পাচ্ছেন?
উত্তর : আমি দুই বছর হলো বিয়ে করেছি। আমি এখন অনেক ভালো আছি। আমার সংসারও অনেক সুখের। আমার স্ত্রী আমাকে প্রতি মুহূর্তে সাপোর্ট করে যেন আমি আরো এগিয়ে যাই। এ ছাড়াও আমার বাবা-মাও আগের মতোই আমার পাশে আছেন। সব সময় তাদের দোয়া ও সমর্থন পাচ্ছি।
প্রশ্ন : ৯ বছরের সুখ-দুঃখ কী?
উত্তর : বিশ্বকাপের যে ম্যাচে আমরা জিতলাম (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে) সেটি আমি কোনো দিন ভুলব না। এটি ভেবেই সুখ পাই যে আমার অবদান আছে এ জয়ে। আর দুঃখ, আমার কারণে দুটি ম্যাচ হেরেছে দল সম্প্রতি। একটি শ্রীলঙ্কাতে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে। তবে, এসব আমাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি জোগাবে।