
জামায়াত নিষিদ্ধের জন্য মার্কিন কংগ্রেসে প্রস্তাব
রাজনৈতিক ডেস্ক : জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উগ্রপন্থী দলগুলোকে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য হুমকি আখ্যা দিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে প্রস্তাব আনা হয়েছে।
প্রস্তাবে ধর্মভিত্তিক এই রাজনৈতিক শক্তিকে ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য হুমকি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। দলটির সক্ষমতার ভিত্তিমূলে আঘাত করার জন্য বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে তাগিদ দেয়া হয়েছে প্রস্তাবে।
মার্কিন কংগ্রেসের এমন প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতসহ ইসলামী উগ্রপন্থী দল ও সংগঠনগুলোকে আশকারা দিয়ে আসছে দেশটি। দেরিতে হলেও তাদের বোধোদয় হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন মনোভাবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পথ সুগম হবে। তাই দ্রæত জামায়াত নিষিদ্ধে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার আহŸান তাদের।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, একসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জামায়াতসহ উগ্রপন্থী দলগুলোকে পোষণ করেছে। জামায়াতকে তারা গণতান্ত্রিক দল বলেও আখ্যা দিয়েছে। কিন্তু যখন দেখছে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পেছনে এসব উগ্রপন্থী দল জড়িত তখন সুর পাল্টাচ্ছে। দেরিতে তাদের অবস্থান বদলালেও এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, সরকার এ ব্যাপারে ধীরে চলো নীতি নিয়েছে। কারণ আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু তাদের নিষিদ্ধ করা সরকারের এখতিয়ার। সরকার সেই কাজে যথেষ্ট ঢিলেমি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানের পর জামায়াত নিষিদ্ধে সরকার আরও উদ্যোগী হবে বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, জামায়াত কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তারা ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে ভÐামি করছে। তাই দ্রæত এদের নিষিদ্ধ করা হোক।
জানা গেছে, ইন্ডিয়ানার রিপাবলিকান দলের কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাংকস প্রতিনিধি পরিষদে এ প্রস্তাব আনেন। এতে বিএনপিসহ বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য উগ্রপন্থী সংগঠনের সংস্পর্শ থেকে দ্ব্যর্থহীনভাবে দূরে থাকার আহŸান জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য প্রস্তাবটি কংগ্রেসের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
প্রস্তাবে দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ধর্মীয় দলগুলোকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আল কায়দা ও তালেবানের সঙ্গে জামায়াত সদস্যদের যোগাযোগ আছে। এ দল ও তাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত উগ্রপন্থী দলগুলো দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা ও ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশের জন্য হুমকি। ফলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সহিংসতার গুরুতর ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অপর এক প্রস্তাবের বরাত দিয়ে এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে সেখানেও দ্ব্যর্থহীনভাবে জামায়াত থেকে বিএনপিকে দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে। কংগ্রেসম্যান ব্যাংকস বলেন, বাংলাদেশের বিরোধী রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন প্রকাশ্যেই বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহŸান জানিয়েছেন।
রিপাবলিকান দলের এই কংগ্রেসম্যান জানান, জামায়াতে ইসলামীর ভাবধারা পোষণ করে এমন অনেক সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রেও রয়েছে। এগুলো তহবিল সংগ্রহে যুক্ত। এ ক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ হিসেবে ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা, শেয়ার লিডারশিপের নাম উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর বারবার হামলা, চরমপন্থার বিস্তার এবং জামায়াতসহ সংশ্লিষ্ট মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থের জন্য হতাশাব্যঞ্জক। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ধর্মীয় উগ্রপন্থা ও জঙ্গিবাদের বাড়বাড়ন্ত রোধে মানবাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র রক্ষার মতো বিষয়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে ও বাইরে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সব প্রতিষ্ঠানকে তহবিল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার দাবি করা হয়েছে প্রস্তাবে। এসব সংস্থার মধ্যে রয়েছে ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা, আইসিএনএ রিলিফ, হেল্পিং হ্যান্ড ফর রিলিফ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও দ্য মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা।
এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, একসময় তারা জামায়াতে ইসলামীকে মডারেট গণতান্ত্রিক দল বলে আখ্যা দিয়েছিল। দেরিয়ে হলেও তাদের বোধোদয় হয়েছে। তিনি বলেন, বহুদিন ধরে আমরা জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছি। এটা এখন সময়ের দাবি।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তিত অবস্থানে স্বাধীনতাবিরোধী এ দলটিকে নিষিদ্ধের পথ আরও সুগম হবে বলে আমি মনে করি। এদের শুধু নিষিদ্ধ করলেই হবে না। এদের আদর্শ নির্মূল করতে হবে। ধর্মের নামে দেশে রাজনীতি নিষিদ্ধ করারও দাবি জানান তিনি।