ঠিকানা রিপোর্ট: কেটু (K-2)(ল্যাবরেটরীতে তৈরি সিন্থেটিক ড্রাগের ককটেল বা সহজ কথায় সিন্থেটিক মারিজুয়ানা) ওভারডোজে ২ সপ্তাহে ব্রুকলীনে ২৪০ জনের মৃত্যুর পটভ’মিতে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তাগণ নড়েচড়ে বসেছেন। ৩ জুন পুলিশ কর্মকর্তাগণ জানান যে ঝটিকা ও সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তারা ৭৪ জন মাদকাসক্ত ও ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছেন এবং হাজার হাজার প্যাকেট সিন্থেটিক ড্রাগ জব্দ করেছেন।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের বর্ণনা অনুসারে কেটু নামক বিষাক্ত ড্রাগের প্রতি হাজার হাজার সেবনকারী অতিমাত্রায় আসক্ত হয়ে পড়েছে এবং ড্রাগটি সেবনের পর তারা পুরোপুরি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে ও সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে। পুলিশ কর্মকর্তাগণ আরও জানান, হাল্ক, কটন বলস এবং স্কুবি ¯স্নাক্স ইত্যাদি নামে ড্রাগগুলো বিপণন ও আমদানি করা হয় এবং তারা ব্রুকলীন ও ব্রাউন্সভিলে হানা দিয়ে তারা ৪ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও ১,০৬৮ প্যাক মাদকদ্রব্য জব্দ করেছেন। পুলিশ কর্মকর্তাগণ আরও জানান, এ সকল এলাকায় ওভারডোজের মহামারির জন্য মূলত কেটুই দায়ি। ব্রুকলীন নর্থ ডিটেকটিভ বিউরোর ডেপুটী প্রধান মাইকেল কেম্পার জানান, মাদক দ্রব্য ছাড়াও তারা হানা দেয়া আস্তানাগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও মালমশলা উদ্ধার করেছেন।
চীফ অব ডিটেকটিভ ডারমট শিয়া বলেন, কেটু নিজের দখলে রাখার জন্য গ্রেপ্তার হওয়া একব্যক্তিকে একই অপরাধে ইতোপূর্বে ৮ বার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। শিয়া বলেন, চোখ ঝলসানো কার্টুন ও নানা ধরনের রঙ বেরঙের প্যাকেট দেখে ২-৩ বছরের শিশুরাও সেগুলো ঝাপটে ধরবে। তবে এ সকল প্যাকেটের মধ্যে রয়েছে প্রাণসংহারি বিষধর সর্পতুল্য ড্রাগ। তিনি আরও বলেন, নেশাগ্রস্তদের অনেকেই এ সকল ড্রাগের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে হয়ত বা অবহিত নয়।
২০১৫ সালেই কেটুকে নিয়ে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তাদের শিরঃপীড়া শুরু হয়। তখন মারিজুয়ানার চেয়ে কেটুর অধিকতর ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের নজরে আসে। এই মাদকের দৈহিক ক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে: বমি বমি ভাব, ভ্রম সৃষ্টি, বমি হওয়া, রক্তচাপ বৃদ্ধি, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, খিচুনি ও সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলা। ব্রুকলীনের উত্তরাংশের এলাকাগুলোতে ওভারডোজের হার অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯ মে থেকে পুলিশ কর্মকর্তাগণ অভিযান শুরু করেন বলে জানা যায়। ডেপুটী প্রধান কেম্পার জানান, অভিযান শুরুর পর থেকে ৭৪জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ওভারডোজ আসক্তদের মধ্যে কম বয়সী ছেলে-মেয়েসহ ৭০ বা তদুর্ধ বয়সীরা রয়েছে। তিনি আরও জানান, বোডেগা এবং ছোট ছোট স্টোর থেকে এ সকল মাদকদ্রব্য কেনাবেচা করা হয়। বর্তমান অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে স্টোরগুলো বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমান হেরোইন কিংবা কোকেইন বিক্রির অনুকরণে ডিলারগণ কেটু বিক্রি করে যাচ্ছে। বাইরের জগত থেকে আমেরিকায় কেটুর চালান আসছে বলে শিয়া জানান। এমনতর বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে নিজ নিজ উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা অভিভাবকদের দায়িত্ব বলে বিদগ্ধজনদের অভিমত। কারণ উঠতি বয়সীরা একবার নেশায় জড়িয়ে পড়লে এই রাহুবন্ধন ছিন্ন করা বহুলাংশে দুঃসাধ্য।